মনোরোগ বিভাগে বিকালের পর থাকেন না চিকিৎসক

জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা । উচ্চ শিক্ষার এমডি কোর্স চালু হলে সংকট থাকবে না; অভিমত চিকিৎসকদের

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে বিকেলের পর থাকেন না চিকিৎসক। ফলে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, মনরোগ বিদ্যা বিভাগে অধ্যাপদের পদ থাকলেও এই পদটি বর্তমানে খালি আছে। বিভাগে একজন অধ্যাপক থাকলে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের ‘এমডি কোর্স’ চালু করা যেত। তখন ট্রেইনি স্টুডেন্টদের দিয়ে দিয়ে পালাক্রমে সার্বক্ষণিক কাজ করানো যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত রোগ অন্যান্য সাধারণ রোগের মতোই একটি রোগ। কিন্তু আমাদের দেশে কারো মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তাকে ‘পাগল’ বলা হয়। তাই মানসিক সমস্যা যখন ছোট পর্যায়ে তখন রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচবোধ করেন। আশপাশের কিংবা বাড়ির লোকে কি ভাববে এটি নিয়ে শঙ্কা জাগে মনে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেয়ার কারণে রোগের ব্যাপ্তি বাড়তে পারে। এক পর্যায়ে রোগী যখন খুব উগ্র আচরণ করে কিংবা মারধর ও জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করে তখনই স্বজনের ধরে বেঁধে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অথচ সঠিক সময়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে রোগী শতভাগ সুস্থ থাকতেন। বর্তমানে চমেক হাসপাতালে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে একজন রেজিস্ট্রার, দুইজন সহকারী রেজিস্ট্রার, একজন আইএমও, তিনজন মেডিকেল অফিসার, একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন।

চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওয়ার্ডে সরকার অনুমোদিত শয্যা রয়েছে ২৩টি। তবে রোগীর চাহিদায় বিবেচনায় ৬০টি শয্যা বসানো হয়েছে। তবে ওয়ার্ডে চিকিৎসক সংকটের কারণে রাতের বেলা কেউ থাকেন না। অপরদিকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী রয়েছেন ৪ জন। মানসিক রোগীরা যেহেতু ভাঙচুর মারামারি কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তাই নিভৃত করার জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকটের কারণে ওয়ার্ডে প্রায় সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।

চমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে গাদাগাদি করে রোগীরা শুয়ে আছেন। কেউবা চিৎকার করছেন আবার কেউ গলা ছেড়ে গান গাইছেন। বিকেলের পর থেকে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা জরুরি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মমর্যাদাবান, অন্যের প্রতি আস্থাবোধ, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি, গভীর অনুভূতি, অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার শক্তিসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে চরিত্রে এসব বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতিতে একজন মানুষের ভিতের ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া বর্তমানে শিশু কিশোরদের মধ্যেও মানসিক রোগ তৈরির ক্ষেত্র বেড়েছে বহুগুণ। ইন্টারনেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন গেমস, শারীরিক পুষ্টিজনিত অভাব এবং বংশগত কারণেও শিশু কিশোররা মানসিক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণে মানসিক রোগী তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পর নারীদের হরমোন সংক্রান্ত কারণসহ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় মানসিক রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরানাপন্ন হলে প্রতিটি রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

চমেক হাসপাতাল মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হিমাদ্রি মহাজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে আগে রেজিস্ট্রার ও আইএমও ছিল না। এখন সে পদ সৃষ্টির পরে নিয়োগ হয়েছে। ফলে চিকিৎসকের সংকট অনেকটা ঘুচেছে বলা যায়। তবে একজন অধ্যাপক থাকলে আমরা এমডি কোর্স চালু করতে পারতাম। এতে এমডি ট্রেইনি স্টুডেন্টদের দিয়ে ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া যেত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে কিশোরের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআজাদী সম্পাদককে অভিনন্দন জানালেন আল্লামা সাবির শাহ