ধসে যাওয়া পুলিশি মনোবল বাড়ানো এবং ‘পুলিশ নেই’ এমন আবহ থেকে মুক্ত করে আইন–শৃক্সখলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি ও জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে অভিনব এক পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। থানার ওসি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সব সদস্য একসাথে রাস্তায় নেমে এলাকায় এলাকায় টহল দিয়েছে। পুলিশের এই পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। অনেকেই ফুল দিয়ে পুলিশকে স্বাগত জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পাঁচলাইশ থানা পুলিশ অভিনব এই পন্থা বের করে পুরো এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলিং করেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমানের নেতৃত্বে থানার সকল অফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে চৌকশ একটি পুলিশ দল রাস্তায় নামে। ওসির গাড়ির হুইশেলের পাশাপাশি ২০–৩০টি মোটর সাইকেলের এক মহড়া পুলিশি উপস্থিতি জানান দেয় দারুণভাবে। পুলিশের দলটি সাইরেন এবং বাঁশি বাজাতে বাজাতে পাঁচলাইশ থানা মোড় থেকে শুরু করে মির্জারপুল– মুরাদপুর– হামজারবাগ– রহমান নগর– হিলভিউ আবাসিক– রুবি গেইট– ২ নম্বর গেইট– প্রবর্তক মোড়– চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল– অলি খাঁ মসজিদ– বাদুরতলা– বহদ্দারহাট মোড়– শোলকবহর– মুরাদপুর– মির্জারপুল হয়ে পাঁচলাইশ থানায় ফিরে আসে।
পুলিশের অভিনব এই কৌশল রাস্তায় মানুষের নজর কাড়ে। পথচারী এবং গাড়িতে থাকা বহু মানুষ হাত নেড়ে পুলিশকে শুভেচ্ছা জানায়। কেউ কেউ পুলিশের দিকে ফুলও বাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পুলিশের এই অভিনব টহল চলে। এই ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান দৈনিক আজাদীকে জানান, আসলে পুলিশের মনোবল চাঙা করতেই কমিশনার স্যারের নির্দেশনায় এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা যে আছি এবং আইন শৃক্সখলা রক্ষা করতে পুলিশ যে মাঠে ময়দানে কাজ করছে সেটি জানাতেই মূলত এমন একটি রোবাস্ট টহলের উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, মানুষ আমাদের দেখে আনন্দিত হয়েছে, স্বস্তি পেয়েছে। আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। পথে পথে মানুষ যেভাবে আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে তা আমাদের মনোবল বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, জনমনে স্বস্তি ও প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে এভাবে পাঁচলাইশ থানাধীন প্রতিটি আবাসিক এলাকায়ও একেকদিন একেক সময়ে রোবাস্ট পেট্রোলিং করা হবে। এতে আমাদের পুলিশের মনোবলও চাঙা হবে। তিনি বলেন, পুলিশ আছে এটা জানান দেয়ার পাশাপাশি যারা অপরাধ করেছে এবং যারা অপরাধ করবে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে– এই মেসেজটা দেয়ার জন্যও এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর নগরীতে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক হামলা হয়। ওই সময় বহু পুলিশ সদস্য লাঞ্চিত হয়েছেন। অনেকেই থানা থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন থানা পুলিশের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিলেও থানাগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল না। শুধু জিডি রেকর্ড এবং সেনাবাহিনীর সাথে সীমিত পরিসরে যৌথ টহলের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল পুলিশি কার্যক্রম। ইতোমধ্যে পুলিশ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে। থানাগুলো পুরোপুরি সচল হয়ে উঠেছে। যৌথবাহিনীর সাথে পুলিশ নিয়মিত টহলসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু ৫ আগস্টের ঘটনায় সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মনোবল অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নাজুক হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পুলিশের আইজি মোহাম্মদ ময়নুল ইসলাম চট্টগ্রাম সফর করেছেন। তিনি সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ভেঙে যাওয়া মনোবল ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে গেছেন। সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ হাসিব আজিজ ইতোমধ্যে কয়েক দফা সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠে ‘পুলিশের মনোবল’। সেই মনোবল বাড়াতে গতকালের রোবাস্ট পেট্রোলিং বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।