কিশোরগঞ্জের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে যাচাই–বাছাইয়ে আলোচিত বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। একটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে জেলার সংসদীয় আসনগুলোতে এবার মোট ৫৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ–১, ২ ও ৩ আসনে গতকাল বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন নয়জন। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শরীফ আহাম্মদ সাদী ও বিএনপি থেকে নির্বাচিত তিনবারের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান। কিশোরগঞ্জ–৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নাসিরুল ইসলাম খানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। আজ বাকি তিনটি আসনের মনোনয়ন যাচাই–বাছাই করা হবে। খবর বিডিনিউজের।
প্রার্থিতা বাতিলের পর আখতারুজ্জমান সাংবাদিকদের বলেন, আমার প্রার্থিতা বাতিলের ফলে প্রমাণ হয়েছে আমি সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। আমি শুধু বিএনপির ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্যই নির্বাচনে প্রার্থিতা দাখিল করেছিলাম। আমি বিএনপি করি এবং আমৃত্যু বিএনপি করে যাব। বিএনপি চাইলে মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করব।
কিশোরগঞ্জ–৩ আসনে আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খানের প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতির কাগজ দেখাতে না পারায় নাসিরুল ইসলাম খানের প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে। কাগজ জমা দিলেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই আসনটিতে গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ছাড় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনটি নির্বাচনেই নাসিরুলকে মনোনয়ন দিয়েও পরে বসিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার তাকে ভোটের মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।
শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল এমপি হারুনের : ঝালকাঠি–১ আসনে আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও শেষ পর্যন্ত দল সিদ্ধান্ত বদল করায় এ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। দলের মনোনয়ন না পেলেও এ আসনের প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ–কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, তার মনোনয়নপত্রও টেকেনি।
ঝালকাঠি–২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুই আসনেই বাতিল হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র।
নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিরণ ও বিকল্পধারার মান্নানের মনোনয়ন বাতিল : ঋণখেলাপির অভিযোগে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নোয়াখালী–৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মামুনুর রশিদ কিরণ এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) রিপোর্ট অনুযায়ী মামুনুর রশিদ কিরণ একজন ঋণখেলাপি ছিলেন। তাই তার মনোনয়নপত্র আইন অনুযায়ী বৈধ বলার সুযোগ নেই।
মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে যতগুলো ঋণ আছে তার সবগুলোই নিয়ম অনুযায়ী হালনাগাদ আছে। সব কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। সবকিছু বলার পরও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়ন বাতিল করেছেন। আমি নির্বাচন কমিশন বরাবর আপিল করব। আশা করি মনোনয়ন ফিরে পাব।
এদিকে কুলা মার্কার প্রার্থী মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মো. আবু সুফিয়ান খান বলেন, আমাদের প্রার্থীর সব মামলা স্থগিত এবং ঋণ হালনাগাদ রয়েছে। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে।
পঙ্কজ–শাম্মী–সাদিকের মনোনয়ন স্থগিত : বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশালের ছয়টি আসনের ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে; স্থগিত রাখা হয়েছে আরও চারজনের। রিটানিং কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল–৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। সোমবার যাচাই–বাছাইয়ের শেষদিন শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
গণফোরামের এমপি মোকাব্বিরের মনোনয়ন বাতিল : সিলেট–২ আসনের গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মোকাব্বির খানের মনোনয়নপত্র বাতিল প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রার্থী মোকাব্বির খান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে তার মনোনয়নপত্রে নিজেই সই করেন। কিন্তু তিনি যে দলের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন তার কোনো প্রমাণ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। যে কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, আমি ঢাকাতে আসছি মাত্র, এটি সমাধান হয়ে যাবে।
এই আসনে মোকাব্বির ছাড়া আরও ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আসনটিতে মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মনোয়ার হোসেনের।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও শফি আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল : নেত্রকোণা–৪ আসনে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের ছাত্রনেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ এবং নেত্রকোণা–৫ আসনে কর্নেল আবু তাহেরের ছোট ভাই অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, অসম্পূর্ণ তথ্য, সঠিক ভোটারের স্বাক্ষর না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচনী বিধিতে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।