কী এক মহাজাগতিক ঘূর্ণন! এর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ‘মন’ এর শক্তিশালী বিচরণ! সুস্থ সুগঠিত মন এমন একটা অনুষঙ্গ যেটা মানুষকে বোধ ও বুদ্ধির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে বড় বড় বিপদ ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। কড়া কঠিন আত্মপ্রত্যয় বা সুস্থ মন ছাড়া লোভ ও লোলুপতার হিংস্র, নিকৃষ্ট থাবা থেকে নিজেকে বাঁচানো দুষ্কর। সবাই চায় ভালো থাকতে, ভালো খেতে, ভালো পরতে ও নিরাপদ জীবন যাপন করতে। এই ভালো থাকা, খাওয়া, পরার লক্ষ্যে আমরা অবচেতন মনেই অনেক বেশি স্বার্থান্ধ, অমানবিক ও পরশ্রীকাতর হয়ে পড়ি। ওর বাড়ি, ওর গাড়ি, ওর ব্যাংক ব্যালেন্স, ওর রাজ্যের শান শওকত, হীরা জহরত, মণি মাণিক্য অঢেল কাড়ি কাড়ি। কিন্তু এর ছিটেফোঁটাও আমার নেই কেন! এই দুশ্চিন্তায় মনটা দাসত্বে চলে যায়। মন হয়ে যায় নিয়ন্ত্রণহীন। ভেস্তে যায় শিক্ষাদীক্ষা, সুন্দর সুশৃঙ্খল নান্দনিক জীবনের প্রতি অনুরাগ।
দূরত্ব তৈরি হয় মনের সাথে আত্মা ও বিবেক এর। লোভের ফাঁদে পড়ে মন তখন নীল স্বপ্নসাম্রাজ্যে বিচরণ করতে থাকে। রাজ্যের অসম্ভবকে সম্ভব করবার নেশায় মন হয়ে যায় দুর্বল। অস্থির হয়ে পড়ে সামগ্রিক জীবনবোধ। যে কোনো অসতর্কতার ঘোরে পা ফেলতেও সংশয় কাজ করে না। সেল্ফ কন্ট্রোল বা আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে পড়ে। খুন হয়ে যায় সদ গুণাবলী। খুন হয়ে যায় বিবেকবোধ। খুন হয়ে যায় ভালো মন্দের বিভেদ। মন ভুলে যায় সেই কথাটি ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ কী লাভ! প্রতারণা, ঠকবাজি, রঙবাজি, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, ঘুষ, সুদ, অবৈধ অর্থের বিবেকবর্জিত আত্মশ্লাঘার রসাতলে যাবার জীবন! সৃষ্টিরহস্যের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ পশুত্বের লোলুপ হাতছানিতে’ মনুষ্যত্বকে গলা টিপে হত্যা করে।
অথচ এই দুরন্ত অবাধ্য অর্থলিপ্সু লোলুপ পরশ্রীকাতর মনটাকে যদি একটাবার শেকল পরানো যায় তাহলে আর কোনো ভয় থাকে না। হাতে তেল মেখে কাঁঠাল ভাঙলে যেমন কাঁঠালের আঠা হাতে লাগে না ঠিক তেমনি মনটাকে স্বল্পতুষ্ট রাখার কঠিন ব্রতে অভ্যস্থ করলে লোভ লালসা আর তাকে কাবু করতে পারবে না। আর তাই আসুন প্রতিদিনই একটু একটু করে মনের লাগাম টেনে ধরে তাকে নিজের ‘দাস’ বানিয়ে এমন লোলুপ নৈরাজ্যের পারিপার্শ্বিকতায় নির্লোভ, সুশৃঙ্খল জীবনাচরণে অভ্যস্ত ও সফল হই। সুস্থ সুন্দর ও সত্যের সাহচর্যে সবার জীবন হোক অনিন্দ্য সুন্দর।