টাইগারপাস থেকে মাত্র ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে উচ্ছ্বসিত মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, জামালখান থেকে মাত্র ২৭ মিনিটে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান। কিছুদিন আগেও ব্যাপারটি ছিল অকল্পনীয়। অথচ আজ এটি বাস্তব। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হলে নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে গতি আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালু করা হয়েছে। হালকা যানবাহন চলাচলে সিডিএ বাধা দিচ্ছে না। যান চলাচল আংশিক শুরু করে সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে দেখছে। যান চলাচলে যেসব সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে সেগুলো সমাধান করার কাজও চলছে। তবে পুরোদমে চালু করার আগেই টোলের ব্যাপারটি নির্ধারিত করা হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাস হয়ে আসার পর র্যাম্প ও লুপ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর স্থবির হয়ে যাওয়া যান চলাচলে গতি আনাসহ নানামুখী লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৪ হাজার ২শ ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন লাইটিং, সিসিটিভি, রিটেইনিং ওয়ালসহ টুকটাক কাজগুলো করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ১৫টি র্যাম্প থাকছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার মূল অবকাঠামোর সাথে র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার।
টাইগারপাসের আমবাগান সড়কে নামার র্যাম্পটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। লালখান বাজার থেকে ওঠার র্যাম্পের কাজও শেষ। জিইসি মোড় থেকে ওঠার র্যাম্পের কাজ চলছে। এতে করে টাইগারপাস বা লালখান বাজার থেকে ওঠানামা করে এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক চালু করার সুযোগ হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে বিশেষ অনুমতি নিয়ে মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি আর অনুমতি লাগছে না। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার কাঠগড় পর্যন্ত হালকা যানবাহনকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে মোটরসাইকেল এবং সিএনজিচালিত থ্রি হুইলারকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারী গাড়িগুলোকেও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা সীমিত পরিসরে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে দিচ্ছি। যানবাহন চলাচলের ব্যাপারটি মনিটরিং করছি। এতে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে এবং সেগুলো সমাধান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শীঘ্রই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেব। তবে প্রথম দিন থেকে টোল দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে হবে। একবার টোল ছাড়া গাড়ি চলাচল শুরু হলে পরবর্তীতে টোল নেওয়া কঠিন হবে। শুরুতে শুধু লালখান বাজার বা টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত টোল নেবে সিডিএ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং নামার টোল। পরবর্তীতে সবগুলো র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটিতে ৬টি পয়েন্টে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে। দূরত্ব এবং যানবাহনভেদে পৃথক হারে টোল আদায় করা হবে। নগদ টাকা, ব্যাংক কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
আপাতত পতেঙ্গা প্রান্তে দুটি অস্থায়ী টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, এই ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল এবং সিএনজি টেক্সি চলাচল করতে পারবে। যানবাহনভেদে সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা পর্যন্ত টোল নির্ধারণ করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর টোল আদায়ের ব্যাপারটি নির্ধারিত হবে। তবে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার সময় টোল আদায়ের ব্যাপারটি উল্লেখ ছিল বলে সিডিএর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। সিডিএর প্রস্তাবিত টোলে মোটরসাইকেল দূরত্বভেদে ১০ ও ১৫ টাকা, সিএনজি টেক্সি ২০ ও ৩০ টাকা করে, প্রাইভেটকার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বড় বাস ২৮০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার ট্রাক ২০০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলরের জন্য ৪৫০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। টোলের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।