মনা হত্যার ৪ আসামির ভারতে পালানোর চেষ্টা

হবিগঞ্জে গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার পাখির গলিতে সাহেদ হোসেন মনা হত্যার ৪ আসামিকে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চৈঠপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেনপ্রধান আসামি জুয়েল (৩৪), সহযোগী বশির (২৬), সাগর (২৮) ও জুয়েল ওরফে ছোট জুয়েল (২৫)। এদের মধ্যে আসামি সাগর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। বাকি তিন জনের পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিএমপির দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোস্তাফিজুর রহমান শুক্রবার এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হত্যাকারীরা ও মনা আগে এক পক্ষে থাকলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়ে আলাদা দুইটি পক্ষ তৈরি হয়। এ বিরোধের জেরেই মূলত মনার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা হত্যাকাণ্ডের পরপরই চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকা দিয়ে তারা ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিল। বৃহস্পতিবার গোপন খবরের ভিত্তিতে তাদের হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৭ জুলাই রাতে কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোড পাখি গলিতে ছুরিকাঘাতে খুন হন সাহেদ হোসেন মনা; তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্রসহ অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, ভাতের হোটেলের ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধের জেরে পূর্ব পরিচিতরা মনাকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় মনার বাবা শাহ আলম গ্রেপ্তার জুয়েলকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সজীব ও ফরহাদ নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার এজাহারে মনার বাবা মো. শাহআলম অভিযোগ করেন যে, গত ১৫/২০ দিন আগে ১নং আসামি জুয়েল ও ২নং আসামি রহিম মনার পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের মোবাইল নিয়ে যায়। এ বিষয়ে মনা জুয়েলকে ফোন করে মোবাইল নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে মনার সাথে মারমুখী আচরণ করে। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ৭ জুলাই রাত নয়টার দিকে মনা তার পোষা বিড়ালের খাবার কিনতে স্টেশন রোডস্থ পাখির গলিতে যায়। জুয়েলের বন্ধু মুরগি জুয়েল এ খবর জানিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আসামিরা জুয়েলের নেতৃত্বে পাখির গলি এসে মনার ওপর হামলে পড়ে। মারধরের একপর্যায়ে ১নং আসামি জুয়েল, ৯নং আসামি সাগর, ১০নং আসামি বশির (টিউমার বশির) ও ১২নং আসামি শাকিল মনার পেটে, কোমরের নিচে, রানে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত মনাকে উপস্থিত লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে পুলিশেরই নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাতে জুয়েল প্রভাব খাটিয়ে একটি ভাতের হোটেল বসিয়েছিল। কিছুদিন আগে মনার ছেলেরা এসে সেটি ভেঙে দেয়। এটি নিয়েই দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আবার নতুন স্টেশন সংলগ্ন পার্কিংয়ে এবং পাখির গলিতে জুয়েলের নেতৃত্বে দুইটি জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হতো। জুয়ার বোর্ডে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ নিহত মো. সাহেদ হোসেন মনার বাসা বগারবিল, ব্যবসা দিদার মার্কেট হলেও সে থাকতো রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায়। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও দ্রুত বিচার আইনে আটটি মামলা আছে। কোতোয়ালী থানার করা সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম আছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং পরিচালনা, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। ২০২৩ সালের ৯ জুলাই দিনের বেলা প্রকাশ্যে রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকার রয়েল টাওয়ারের সামনে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এক নম্বর আসামি মনা। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মনার নেতৃত্বে একদল কিশোরতরুণ মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনতাই করেছিল। রিয়াজউদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক একাধিক অপরাধ সংঘটনে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্যদিকে রাস্তার অপর পাশে স্টেশন কেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে জুয়েল ও তার বাহিনী। মূলত অপরাধ জগত বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যেই উভয় পক্ষের বিরোধ চরম আকার নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাসের পর মাস অনুপস্থিত চার শিক্ষক, তবুও ভাতা তোলেন
পরবর্তী নিবন্ধসরবরাহ সংকটের অজুহাতে বাড়ছে সবজির দাম