মধ্য সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ ও উত্তর জেলার কমিটি ঘোষণা, সময় লাগবে মহানগরে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ আগস্ট, ২০২২ at ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় তিন মাস। গত ২৮মে দক্ষিণ জেলা, ২৯ মে উত্তর জেলা এবং ৩০ মে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রত্যেক ইউনিটের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পর কাউন্সিলরদের নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কাউন্সিলর অধিবেশনে কাউন্সিলররা সরাসারি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করার দাবি জানালে যুবলীগ চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শাসম পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল যারা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের দুই গ্রুপে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জন্য ১০ মিনিট সময় দেন। কিন্তু মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় কেউই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। তখন কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় গিয়ে যাচাই-বাছাই করে তিন ইউনিটের কমিটি ঘোষণা দিবেন বলে সকলের বায়োডাটা নিয়ে অধিবেশন শেষ করে চলে যান।
কেন্দ্রীয় এক শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৯৩ জন প্রার্থীর মধ্যে কেন্দ্রীয় শর্ট লিস্টে রয়েছে ৯ জনের নাম।
অপরদিকে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ৩২ জন প্রার্থীর মধ্যে কেন্দ্রীয় লিস্টে রয়েছে সাতজনের নাম। এ দিকে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৯জন প্রার্থীর মধ্যে কেন্দ্রীয় লিস্টে ৮জনের নাম রয়েছে। মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের শর্ট লিস্ট থেকেই যোগ্যতার বিচারে ঘোষণা করা হবে মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বহুল কাঙ্ক্ষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম।
এ দিকে সম্মেলনের তিন মাসের মধ্যেও চট্টগ্রাম মহানগর-উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি না হওয়ায় আওয়ামী লীগের বৃহৎ এই যুব সংগঠনের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য শোকের মাস। এই মাসে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো কমিটি ঘোষণা হয় না। আগস্ট শেষে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ ও উত্তর জেলা কমিটি ঘোষণা হতে পারে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য জমা দেয়া বায়োডাটা থেকে যাচাই-বাছাই করে অনেকটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নগর কেন্দ্রিক রাজনীতির নানান সমীকরণ যুক্ত থাকায় মহানগর কমিটির ব্যাপারে আরো একটু সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের এই শীর্ষ নেতা জানান, মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য জমা দেয়া ১৫৪ প্রার্থীর বায়োডাটা থেকে যাচাই-বাছাই করে অনেকটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যান্য পদের জন্য বায়োডাটা জমা পড়েছে প্রায় দেড় হাজারের মতো। সেখান থেকে যোগ্যদের বাছাই করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ নেতারা।
দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে বেশ আলোচনায় ছিলেন সাবেক সভাপতি আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরী। কিন্তু তিনি সম্প্রতি যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর অনীহার কথা জানিয়েছেন। সভাপতি পদে এখন টিপু সুলতান না থাকায় অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে যে নাম গুলো বিবেচিত হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে-দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ ফারুক, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী।
সাধারণ সম্পাদক পদে বিবেচনায় রয়েছেন-কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন মিন্টু, বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, বেসরকারি কারা পরির্দশক আবদুল হান্নান লিটন। এ ছাড়াও কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক রাজীব দাশ হিরো।
গত ২৮মে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পর দ্বিতীয় অধিবেশন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের পরিচালনায় কাউন্সিলরদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত হল ভর্তি কাউন্সিলররা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আবারো আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরীর নাম ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান। তৃণমূল পর্যায়ে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরীর এতো জনপ্রিয়তা দেখে সেদিন কাউন্সিলর অধিবেশনেই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ মাইনুল হোসেন খান নিখিল-টিপু সুলতান চৌধুরীকে যুবলীগের সভাপতি পদে প্রার্থী কিনা জানতে চেয়েছিলেন। আর প্রার্থী হলে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বায়োডাটা কেন জমা দেননি তা জানতে চেয়েছিলেন। তখন আ.ম.ম. টিপু সুলতান বলেছিলেন-আমি প্রার্থী হতে চাইনি। এ জন্য কেন্দ্রে বায়োডাটাও জমা দিইনি। আজকের কাউন্সিলর অধিবেশনে তৃণমূলের কাউন্সিলররা আমার প্রতি তাদের যে সমর্থন ও আবেগ প্রকাশ করেছেন-তাদের আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি এখন প্রার্থী হয়েছি। সে দিন কাউন্সিলরদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে টিপু সুলতান চৌধুরী নিজেকে সভাপতি প্রার্থী দাবি করলেও পরবর্তীতে তিনি আবার মত পাল্টিয়েছেন। তিনি নতুন নেতৃত্বের কাছে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের দায়িত্ব ভার ছেড়ে দিতে চান। এই লক্ষ্যে গত ৩ আগস্ট টিপু সুলতান চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সাথে তাঁর বনানী কার্যালয়ে দেখা করেন। সেসময় তিনি আর যুবলীগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে গতকাল দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আ.ম.ম. টিপু সুলতান চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে দেখা করে-বলেছি আমি আর যুবলীগ করবো না। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আগামী দিনের নেতৃত্বে আমাকে বিবেচনা না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আমি দীর্ঘ ১২ বছর (২০১০ সাল থেকে ২০২২ সালের ২৮ মে পর্যন্ত) যুবলীগ করেছি। এখন আমি চাই-দক্ষিণ জেলা যুবলীগে নতুন ক্লিন ইমেজের মেধাবী নেতৃত্ব আসুক। কারণ আমি এখন আওয়ামী লীগ করবো।’
এ দিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে যাদের নাম কেন্দ্রীয় নেতাদের বিবেচনায় রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর জেলা যুবলীগের সদস্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার বাবুল, উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি নুরুল মোস্তফা মানিক, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, মুজিবুর রহমান স্বপন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হায়দার বাবু, এড. দীপক দত্ত, ইঞ্জিনিয়ার হাসান মুরাদ।
এ দিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম কেন্দ্রীয় নেতাদের বিবেচনায় আছে তারা হলেন- উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন মো. মিজানুর রহমান মিজান বিএ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য রাশেদ খান মেনন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সাংসদ এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে এস এম আল নোমান, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আরজু সিকদার, উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনজুর আলম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাহরাইন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল করিম, শেখ ফরিদ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধুদের সাথে সাঁতার কাটতে নেমে আর ফিরলো না সে
পরবর্তী নিবন্ধ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের টিকাদান পুরোদমে শুরু