দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আরো নাকাল হয়ে পড়ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। খরচ কমাতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আয়ের সাথে ব্যয়ের ব্যবধানে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে অধিকাংশের। অন্যদিকে নিম্নবিত্তশ্রেণির কান্না দেখার যেন কেউ নেই। আলু ভর্তা, ডিম-ডাল খাবে সেখানে বেড়েছে খরচ। ডিম এক ডজন কিনতে হচ্ছে ১৪৫ টাকা, মাঝারি মানের মসুর ডালের কেজি ১০৫ টাকা এবং আলুর কেজি ৩০ টাকা। এছাড়া ঘর ভাড়া, ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ এবং ওষুধ খরচ তো আছেই। কাজীর দেউড়ি মোড়ে কথা হয় দিনমজুর আলী আহম্মদের সাথে। তিনি জানান, ঘরে বউ বাচ্চাসহ ৭ জনের সংসার। এখন আয় কমে গেছে। এরমধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নিজে একবেলা কম খেয়ে হলেও বাচ্চাদের খাওয়াতে হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী ফজলুল করিম বলেন, বেতন পাই ১৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাসা ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেই খরচ হয়ে যায় ১০ হাজার টাকা। বাকি টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এখন সবার খরচ বাড়ছে, ধারদেনা পাওয়াটাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বেসরকারি স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, স্কুল থেকে যে বেতন পাই, এতে সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়ে টিউশন করতে হয়। তারপরেও যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাজারে চাল, ডাল, তেল-চিনি থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। এছাড়া ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এভাবে চলতে থাকলে এ বছর শেষে পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিতে হবে।
পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া এখন ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমে গেছে। এটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে আগেই বেড়েছে পরিবহন খরচ। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই।
ক্যাব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানোটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। তেল-ডাল ও চিনির বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া থেমে থেমে চালের বাজারও বেড়েছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন একটা নজরদারি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকে।