মধ্যবয়সী

আলেয়া আরমিন আলো | রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মাঝবয়েসী নারী! হ্যাঁ, প্রায়ই তাদের শরীর মন খারাপ থাকে। হয়তো বয়সটা তখন এমনই সময় পার করে। শরীরে হরমোনের হেরফেরের কারণে শারীরিক অসুস্থতার সাথে একাকিত্বও ঘিরে ধরে এবং বিষণ্নতায় ডুবিয়ে মারে। এজন্যই তখন নিজেকে ব্যস্ত রাখা খুব প্রয়োজন। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়া, যে যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করা, বই পড়া, বাগান করা, কবিতা আবৃত্তি ও গান শোনা এবং যার যার শখের কাজগুলো যা পেছনের দিনের ঘোড়দৌড় ব্যস্ততায় করা হয়ে উঠেনি তাতে কিছুটা মন দেয়া। আসলে মধবয়সী নারীদের সবদিক সামলে ক্লান্ত শরীর মনেও নিজেকে ভালো রাখার চিন্তাটা নিজেকেই করতে হয়। কারণ এই সময়টাতে স্বামীও খুব ব্যস্ত থাকে বলে তার সময়টাও ক্লান্তি মাড়িয়ে চলে। ছেলেমেয়েরাও বড়ো হয়ে যায় বলে এত গা ঘেঁষে থাকে না। তাদেরও তখন নিজস্ব জগৎ তৈরি হয় এবং সেই জগতে নিজস্ব স্বপ্নের চারা বুনতে তারও নিজেকেই সময় দেয় বেশি। মধ্যবয়সী নারীরা খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতিতে খুর তাড়িত হয় হৃদয়। সবাইকে আগের মতো করে কাছে না পাওয়ার অতৃপ্তিটাও কষ্টবোধে অকারণ অভিমানে বুক ভারি করে। স্বামীর সামান্য কটুবাক্য অবহেলা হয়ে তখন পুরনো প্রেমিক স্বামীর স্মৃতিগুলো ছায়াছবির মতো দুচোখের আরশিতে জলের ঢেউ তোলে। বড়ো হয়ে যাওয়া বাচ্চাদের যৌক্তিক কথাবার্তায়ও মাঝেমধ্যে নিজেকে নগণ্য মনে হয়। মনে হয় পৃথিবীতে তার বুঝি কেউ নেই। সবার প্রয়োজনে সে তার সবটুকু দিয়ে পাশে ছিল। অথচ, তার নিজের প্রয়োজনে কেউ হয়তো তেমন সাড়া দেবে না। সে বুঝি একদমই একা, খুব বেশিই একা! আসলে মাঝবয়সে এসে হয়তো আগের মতো করে স্বামী স্ত্রী দুজনেরই আর একসাথে বসে তেমন চা কিংবা কফির মগে চুমুকের উষ্ণতায় আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে প্রেমালাপে মত্ত হওয়ার সময় সুযোগ থাকে না। কিন্তু সম্পর্কে মায়ার সুতোর বন্ধনটা নীরবে আগের চেয়েও অনেক বেশি শক্ত হয়ে যায়। যা একসময় ভুল বোঝাবুঝির অল্প বাতাসে ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় হতো, তা এই বয়সে ঝড়ো বাতাসেও টলে না। সম্পর্কে প্রেম ভালোবাসা থাকলেও এসময়টাতে আবেগের বাড়াবাড়ি থাকে না। প্রেম হয় শান্ত শীতল নদীর মতো। বয়ে চলে তবুও ঢেউয়ের তোড়ে তীর ভেঙে যাওয়ার আশংঙ্কা থাকে না। একসাথে একই আবাসে বহুদিন বসবাসেও সন্তানের মমতার শিকড়বাকড়ে আঁকড়ে যায় দুজনার চারপাশ। তখন বিশ্বাস এবং আস্থাও বাড়তে বাড়তে সামান্য টিলা থেকে পাহাড়ে রূপান্তরিত হয়। যা দেখানোর নয় শুধু অনুভব করা যায়। সম্পর্ক তখন নির্জীব হলেও ভেতর থেকে তা নিখাদ হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে