মদুনাঘাটের ৪শ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন পুরোদমে চালু

এটি দেশের প্রথম জিআইএস গ্রিড সাবস্টেশন মাতারবাড়ি ও বাঁশখালী কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের জন্য এটি নির্মান করা হয়

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম সর্বাধুনিক জিআইএস গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ মদুনাঘাট হয়ে মেঘনাঘাট জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের লক্ষ্যে এ গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো সাবস্টেশনটি জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। একই ভাবে বাঁশখালী এসএস পাওয়ারের উৎপাদিত বিদ্যুৎও মদুনাঘাট গ্রিড সাব স্টেশন দিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।

মদুনাঘাটে দেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ২১শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০০/২৩০ কেভি মদুনাঘাট গ্রিড সাব স্টেশনটি পুরোদমে চালু হওয়ার ফলে এখন পিডিবি ইচ্ছে করলে ঢাকার সাথে কথা বলে চট্টগ্রামের জন্য বাড়তি লোড রাখতে পারবে বলে জানান পিডিবির এক প্রকৌশলী। আগে লোড রাখার সক্ষমতা না থাকায় ইচ্ছে করলেও লোড রাখা সম্ভব ছিল না।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি গ্রিড সাবস্টেশন চালু থাকলেও সেগুলো এয়ার ইনস্যুলেটেড সুইচগিয়ার (এআইএস) প্রযুক্তির। এই সাবস্টেশন নির্মাণ ও পরিচালনায় বেশি ভূমির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, সর্বাধুনিক গ্যাস ইনস্যুলেটেড সুইচগিয়ার (জিআইএস) প্রযুক্তির সাবস্টেশন নির্মাণে ভূমি কম লাগে, দক্ষতাও (এফিসিয়েন্সি) তুলনামূলক বেশি। জিআইএস প্রযুক্তির সাবস্টেশন দেশে নতুন নয়। তবে সেগুলো ২৩০ কেভি অথবা ১৩২ কেভি ক্ষমতার জিআইএস সাবস্টেশন। কিন্তু মদুনাঘাটে জিআইএস প্রযুক্তিতে প্রথম ৪০০ কেভি ক্ষমতার গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। যা দেশের প্রথম জিআইএস গ্রিড সাবস্টেশন।

এই ব্যাপারে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ঢাকাচট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেনথেনিং প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. এনামুল হক আজাদীকে বলেন, ২১শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০০/২৩০ কেভি মদুনাঘাট গ্রিড সাবস্টেশন চালু হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন সর্বাধুনিক জিআইএস গ্রিড সাবস্টেশন। মদুনাঘাট ৪০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনটি চালুর ফলে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং বাঁশখালী এসএস পাওয়ারের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মদুনাঘাট গ্রিড সাব স্টেশন দিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, মদুনাঘাটে ২১শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড সাব স্টেশন চালু হওয়ায় এখন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এবং বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মদুনাঘাট হয়ে মেঘনাঘাট জাতীয় গ্রিড সাবস্টেশনে যায়। আগে মদুনাঘাটের ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় আমরা লোড রাখতে পারতাম না। এতদিন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মদুনাঘাট গ্রিড সাবস্টেশনে আনা সম্ভব হয়নি। আগে মাতারবাড়ির থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক বিদ্যুৎ সরাসরি মেঘনা ঘাট গ্রিড সাবস্টেশনে যেত। বাকি অর্ধেক বাঁশখালী এসএস পাওয়ার হয়ে মদুনাঘাট গ্রিড সাবস্টেশন দিয়ে যেত মেঘনাঘাট। তখন ইচ্ছা করলেও মদুনাঘাটে বাড়তি লোড রাখা সম্ভব ছিল না। কারণ লোড রাখার মত সক্ষমতা ছিল না। এখন মাতারবাড়ি এবং বাঁশখালী এসএস পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ মদুনাঘাট জাতীয় গ্রিড সাবস্টেশন দিয়ে সঞ্চালন করা হয়। এর ফলে আমরা ইচ্ছা করলে এখন চট্টগ্রামের জন্য বাড়তি লোড রাখতে পারবো; যেহেতু চট্টগ্রাম দিয়ে যাচ্ছে। আগে তো আমরা লোড রাখতে পারতাম না। আমাদের ক্যাপাসিটি ছিল না। এখন যেহেতু আমাদের এদিকে দিয়ে লোড যাচ্ছে চট্টগ্রামে চাহিদা থাকলে ঢাকার সাথে কথা বলে চাহিদা মত লোড রাখা যাবে। এটা একটি বড় সুবিধা হয়েছে চট্টগ্রামের জন্য।

উল্লেখ্য, এই প্রকল্পে বাস্তবায়নে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল পিজিসিবির সাথে জাপানের হিটাচি করপোরেশন ও চীনের ইটার্নএর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়েছিল। ৩৪ মাসের মধ্যে মদুনাঘাট ৪০০/২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করে পিজিসিবির কাছে হস্তান্তরের জন্য চুক্তি হলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। কাজ শেষ হয়েছে মাত্র চলতি বছরের জুনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধচাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান গ্রেপ্তার, ৮ দিনের রিমান্ড