রাজধানীর মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সংগঠনের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে মতিঝিল এনসিটিবি সংলগ্ন মেট্রোরেলের নিচে এই সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৯ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন শ্রেষ্ঠা রূপাইয়া (২৪), ইসাবা শুহরাত (২৫), রেংইয়ং ম্রো (২৭), ফুটন্ত চাকমা (২২), ধনজেত্রা (২৮), অনন্ত ধামায় (৩৫), ডিবিসি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক জুয়েল মার্ক (৩৫), শৈলী (২৭), দনওয়াই ম্রো (২৪) তনিচিরাং (৩০)। খবর বাংলানিউজের।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, নয়জন আহত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার পরিদর্শক মো. হাইমেনুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ বাদ দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড– এনসিটিবি। গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
চিত্রকর্মটি পুনর্বহাল দাবিতে ‘আদিবাসী ছাত্র–জনতা’ গতকাল এনসিটিবি ঘেরাও করতে যায়। এদিকে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশ এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ ৫ দফা দাবিতে গতকাল সকালে এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সংগঠন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।
হামলার ঘটনায় স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক। তার তথ্য মতে আরিফুল খবির, শওকত, আব্বাস, রাজন হোসেন, ওয়াফী, মনোয়ার, নুহান, জিহাদ ও সজিব আহত হয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতার পক্ষে মিছিলে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ব চাকমা বলেন, মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের মুখোমুখি অবস্থান হয়। কিছুক্ষণ পরই আদিবাসী যুব ফোরামের নেতা অনন্ত ধামেইকে আহত করে সভারেন্টির সদস্যরা। সেই হামলার প্রতিবাদে আগামী ১৭ তারিখ প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন আদিবাসী নেতারা। তিনি বলেন, আমরা মেট্রো স্টেশনের নিচে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।
অন্যদিকে প্রথমে হামলার ঘটনা অস্বীকার করেছেন স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল হক। তিনি বলেন, আমাদের এনসিটিবি ঘেরাওয়ের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। তবু কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, তাই আমরা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু না করে দৈনিক বাংলা ও আশেপাশে সবাইকে অবস্থানের কথা বলি। কর্মসূচি শুরু করার পর এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের ছয়জন প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করে। তারা আমাদের সব দাবি মেনে নেয়। আমরা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নামার সময় শুনি, আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ তাদের থামতে বলেছে। কিন্তু তারা ব্যারিকেড ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। হাতে লাঠির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের হাতে পতাকা ছিল। কিন্তু ওরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলছে, জাতিগত বিভাজন টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা ও এনসিটিবির সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল হবে।