মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার্থীর ঢল

শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা সম্পন্ন, মহানবমী আজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী আজ। কাল মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব। গতকাল শনিবার ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী। দুর্গোৎসবে অষ্টমী পূজা গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রামের মন্দিরে মন্দিরে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়েছে মহাঅষ্টমী। অষ্টমী পূজার একটা অংশ হচ্ছে কুমারী পূজা। কুমারী পূজা হলো ষোলো বছরের কম বয়সী কুমারী মেয়ের পূজা। দুর্গাপূজার অংশ হিসেবে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী ও বিভিন্ন উপজেলার মণ্ডপগুলোতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের ন্যায় এবারও নগরীর পাথরঘাটা রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সকাল থেকেই রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে ভক্ত-অনুসারীদের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মণ্ডপ।
দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। কুমারীর মধ্যে মাতৃরূপ দর্শন-এ এক প্রাচীন রীতি। এ দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে বিজয় লাভ করেছিলেন। এই পূজার দিনে ভক্তরা বিধিসম্মতভাবে অষ্টমীবিহিত পূজা করে দেবী দুর্গার কৃপা প্রার্থনা করেন।
অষ্টমী তিথিতে পূজা করার সময় দেবীকে মহালক্ষ্মী হিসেবে সম্পদ, স্থায়িত্বশীলতা, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। পূজা শেষে পূজারীগণ দেবীর উদ্দেশে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন। অষ্টমী তিথির পূজায় নয়টি পাত্রে বিভিন্ন রঙের পতাকা স্থাপন করা হয়। দেবীর নয়টি শক্তিকে উৎসর্গ করে অষ্টমী বিহিত পূজার নির্ধারিত মন্ত্র পাঠ করে পূজা করা হয়। এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে দেবী দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
আজ রোববার নানা আচারের মধ্য দিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে যথারীতি হবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। আজ সকাল থেকেই শুরু হবে মহানবমী পূজা। সকাল ১১টা ৪১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে শেষ হবে মহানবমী। এরপর দশমী শুরু হবে। তাই নবমী পূজা শেষ হবে বেলা ১১টা ৪১ মিনিটের মধ্যে। পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের চতুর্থ দিনে মহানবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে ছড়িয়ে পড়বে আনন্দের রেশ।
পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আগমনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেমন উৎফুল্ল হন, তেমনি বিদায় ঘিরে বাজতে শুরু করে বিচ্ছেদের সুর। আগামীকাল দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব।
গতকাল সকালে মহাঅষ্টমী পূজা শেষে ভক্তরা মণ্ডপে মণ্ডপে অঞ্জলি গ্রহণ করেন। বিকালের পর থেকে প্রতিটি মণ্ডপে পূজার্থীদের ঢল নামে। বিশেষ করে নগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জেএম সেন হলে সন্ধ্যার পর থেকে পূজার্থীর ভিড় লেগে যায়। এছাড়া চেরাগী পাহাড় মোড়, জামালখান, মোমিন রোড, পাথরঘাটা, হাজারী লেইন, সতীশ বাবুল লেইন, আগ্রাবাদ একতা সংঘ, দক্ষিণ নালাপাড়া, পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি লেইন, রহমতগঞ্জ কুসুম কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সিটি কর্পোরেশনের পূজামণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে পূজার্থীদের ভিড় লেগে যায়। সামলাতে হিমশিম খেতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের।
শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির : নগরীর পাথরঘাটার রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজের পৌরহিত্যে কুমারী পূজা সম্পন্ন হয়। শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে এবার কুমারীরূপে মায়ের আসনে বসানো হয়েছে সেন্ট যোসেফ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া বিশ্বাসকে। তার বয়স ৯ বছর হওয়ায় কালসন্দর্ভা নামে পূজা করা হয়। শাস্ত্রমতে এ নামের কুমারী পূজিত হলে দারিদ্র্য ও শত্রু বিনাশ হয় বলে জানান শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে মোহন্ত শ্যামল সাধু। তিনি জানান, ২০০৪ সাল থেকে এ মন্দিরে কুমারী পূজা হয়ে আসছে। শ্রেয়া দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের ডা. বিপ্লব বিশ্বাস ও স্মৃতিকণা বিশ্বাসের নাতনি। তার বাবা শ্যাম কুমার বিশ্বাস ও মা তনিমা বিশ্বাস টিনা।
মোহন্ত শ্যামল সাধু জানান, শাস্ত্রমতে ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস এই পাঁচ উপকরণে কুমারী মাকে পূজা করা হয়। মহাঅষ্টমীর দিন মানবকল্যাণের জন্য ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারী কন্যাকে মনোনীত করা হয়। বয়সভেদে কুমারী মায়ের নাম ভিন্ন হয়। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোতে রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদোহাজারী পিডিবির শাটল ট্রেন লাইনচ্যুত
পরবর্তী নিবন্ধঅন্য প্রতিষ্ঠানে থাকছে না সচিব পদ-পদবি