জাতিগত সহিংসতায় আক্রান্ত মণিপুর রাজ্যে একদল উন্মত্ত লোক দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটাচ্ছে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনায় অজ্ঞাত সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারতের পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশনেও এই ঘটনার আলোচনাই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
মণিপুরের এই ঘটনা ভারতকে লজ্জিত করেছে মন্তব্য করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না। আইন যে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, সে বিষয়ে আমি দেশকে আশ্বস্ত করতে চাই। মণিপুরের কন্যাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা ভুলে যাওয়া হবে না, উত্তরপূর্বের রাজ্যটিতে সহিংসতা শুরু হওয়ার দুই মাসেরও বেশি সময় পর মণিপুর নিয়ে নীরবতা ভেঙ্গে এমনটাই বলেছেন মোদী। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, দুই নারীকে নগ্ন করে হাঁটানোর ভিডিও নিয়ে আদালত খুবই মর্মাহত, তিনি সরকারকে এ ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও বলেন।
দুই নারীর ওপর আক্রমণের ঘটনাটি গত ৪ মে ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সমপ্রতি ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে শুরু হলে বৃহস্পতিবার তা ভারতের জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনামে জায়গা করে নেয়। মণিপুরে মে মাস থেকে শুরু হওয়া জাতিগত সহিংসতা এরই মধ্যে অন্তত ১৩০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, হাজার হাজার বাসিন্দাকে করেছে বাস্তুচ্যুত।
রাজ্যটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য সেই মেইতেইরা আদিবাসী মর্যাদা চাওয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে কুকি সমপ্রদায়ের সদস্যদের সংঘর্ষ বাঁধে। আদিবাসী মর্যাদা পেলে মেইতেই–রা বনভূমি ও সরকারি চাকরিতে নানান সুযোগ সুবিধা, শিক্ষায় কোটা সুবিধা পাবে।
দুই পক্ষের সংঘর্ষ এরই মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে নিজভূমে শরণার্থী বানিয়ে দিয়েছে।
সহিংসতায় আক্রান্ত রাজ্যটিতে সফর না করায়, কিংবা সহিংসতা নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু না বলায় বিরোধীরা অনেকদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমালোচনা করে আসছেন। দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ভয়ানক ভিডিওটি বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তৃত পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে একদল উন্মত্ত লোককে ওই দুই নারীকে টেনে হিঁচড়ে একটি মাঠের দিকে ঠেলে দিতে দেখা যায়। ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডালস ফোরাম (আইটিএলএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, কাংপোকপি জেলার একটি গ্রামে কুকি–জো সমপ্রদায়ের ওই দুই নারীর সঙ্গে এ বর্বরতা হয়েছে। দুই নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।