মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী : মুসলিম জাতীয়তাবাদের বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব

| বৃহস্পতিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫১৯৫০)। ইসলামি চিন্তাবিদ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও সাংবাদিক। তিনি ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে আগস্ট চট্টগ্রামের তৎকালীন পটিয়া (বর্তমান চন্দনাইশ) উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষক বাবার তত্ত্বাবধানে শিক্ষা জীবন শুরু করে পরবর্তীতে হুগলী ও কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করেন। রংপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। দেশ বিদেশের বহু জ্ঞানী গুণী মানুষের সংস্পর্শে এসে মওলানা মনিরুজ্জামানের ভেতরে এই চেতনার উন্মেষ ঘটে যে, অবিভক্ত বাংলার সাধারণ মুসলিম জনগণের অন্ধত্ব, অশিক্ষা, গোঁড়ামী, দারিদ্রতা দূর করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাঁর প্রচেষ্টায় উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং চট্টগ্রামের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা, কদম মোবারক এম ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয় ও বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয়। মওলানা মনিরুজ্জামান ছিলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদের বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব। তিনি তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সাংবাদিকতাকে গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি সোলতান (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মুহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনূর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) ও আলএসলাম (১৯১৩) পত্রিকার সম্পাদনা ও প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন (১৯০৬)। ইসলামাবাদী ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের বেঙ্গল প্যাক্ট এর অন্যতম স্থপতি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতি ছেড়ে কৃষক প্রজা পার্টিতে যোগদান করেন। এই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মওলানা ইসলামাবাদী আঞ্জুমানউলামাবাঙ্গালার (১৯১৩) অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এটি পরবর্তীকালে ‘জামিয়াতউলামাবাঙ্গালাহ’ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। আঞ্জুমানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বাংলা ভাষাকে জনপ্রিয় করে তোলা। তিনি জামিয়াতউলামাহিন্দ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং তিনি ১৯২২ ও ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাহিত্য সম্মেলন করেন। ইসলামাবাদী চট্টগ্রামে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মাওলানা ইসলামাবাদী ৪২টির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলোর মধ্যে ১. ভারতে মুসলিম সভ্যতা, . সমাজ সংস্কার, . ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমান, . ইসলাম জগতের অভ্যুত্থান, . ভারতে ইসলাম প্রচার, . সুদ সমস্যা, . ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান (৩ খণ্ডে), . ইসলামী শিক্ষা, . কোরআন ও বিজ্ঞান, ১০. আত্মজীবনী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবিরহের বাঁশি