লিফটে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। তিনটা লিফট কাজির দেউড়ি সিডিএ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেঙের প্রবেশপথে। একটা চালু সবসময়। চাপ বাড়লে দুটো। নিরাপত্তারক্ষিদের উপর কড়া নির্দেশনা, স্যানিটাইজার নেয়ার পর মাস্ক ছাড়া কোন ভদ্রলোককে লিফট ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। সতর্কতা বোর্ডও আছে। কিন্তু, কে শোনে! দিনে যে ক’বার লিফট চাপি, মাস্কছাড়া ভদ্রলোক/ মহিলা চোখে পড়বেনই। মেদবহুল শিক্ষিত জনও। বেশিরভাগ গেস্ট। নিজেদের ভিআইপি দাবি করে গার্ডদের পাত্তাই দেন না। অসহ্য লাগলে মাঝে মাঝে মৃদুমন্দ ব্যবহারও উপহার দেই। কিন্তু ওনারা এসব কানেই নেন না। অথচ করোনা অতিমারিতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর নাজুক। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে সিট নেই। আইসিইউ শয্যা নেই। যিনি আইসিইউতে অঙিজেন নিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন তিনি জানেন, অঙিজেন ঘাটতির কষ্ট কত ভয়াল! সাধারণত লিফট সুপরিসর নয়, নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে খুব কাছাকাছি থাকতে হয়। মাস্কপরাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা না মানলে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় সবচেয়ে’ বেশি। ঘটছেও তাই। শ্রমজীবী নন, সুখী স্বচ্ছল মানুষই বেশি করোনার শিকার হচ্ছেন। তবুও- তাঁরা যদি পাত্তা না দেন, কীভাবে করোনা থেকে সুরক্ষা সম্ভব?
থাকি ৮ তলায় বড় ছেলে-বউমার অ্যাপার্টমেন্টে। সাথে আছে মধুঝরা আধো আধো বোলের একমাত্র নাতি ইফরাজ, ডাকি নীল। চঞ্চল আর দুষ্টু। মাকে জ্বালিয়ে মারে রাতদিন। ওর জন্য অতিরিক্ত সতর্ক থাকতেই হয়। ডোরবেল বাজলেই টুকটুকে পায়ে দৌড়। প্রশ্ন কে, কে! আগন্তুকের নাম বলতেই হবে। দেরি করলে আবার দৌড়, ‘মা আসতো, কথা কয়না যে’। মা কাজে থাকলে বা দেরি করলে বাড়ে রাগ। নাম ধরে বলে, ‘এই শিমুল এতো, এতো বলতি’ (এসো এসো বলছি)। অন্য কেউ খুলতে পারবে না, মাকে দরজা খুলতেই হবে। এরকম অনেক মজার কান্ড ওর। আমি হলাম, বাদাম সরবরাহকারী। হঠাৎ এসে একটা আঙুল উঁচু করে বলবে, ‘দাদ্দা, বাদাম একতা’।
‘মাত্র একটা’? হ্যা একতা দাও। কৌটা খুলে একটা দিই। না যাবেনা বলে, আরেকতা, সাথে দু’ আঙুলের সঙ্কেতও। আরেকটা দিলে হাতে নিয়ে দৌড়। নিয়ে আসবে বড় বাটি। বলবে, ‘আলো দাও-বেতি দাও-সব দাও’! বেশি দিলে বাটি থেকে নিজেই অর্ধেক তুলে নিয়ে বিছানায় রাখবে। বলবে, ‘লাখ এতব তুমি খাও,’ তারপর আরেক দৌড়ে মায়ের কাছে।
আড়াই বছরের কাছাকাছি নাতি ইফরাজের আধো বোল, দুষ্টুমির মায়ার যাদু কাঠির নেশায় কী যে মোহ! শব্দে বুনন অসম্ভব। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেঙের অতিথি বা কিছু বাসিন্দার অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদ আচরণে বুকে কাঁপন উঠে। অথচ ইফরাজ ঘর থেকে বের হয়ে টেরেস বা করিডরে গেলেও মাকে বলে নিজে মাস্ক পরে নেয়। তারপর গুট গুট করে মায়ের হাত ধরে হাঁটে। কথা হচ্ছে, একজন দুধের শিশু যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হতে শিখে, আমরা বয়সী তালেবের শিক্ষিত জনরা শিখবো আর কখন! কবরে বা চিতায় উঠে নাকি!