বন্যার ভয়াবহ রূপ যারা দেখেনি, তারা কল্পনাও করতে পারবে না প্রবল পানির গ্রোতে কীভাবে গোটা জনপদ ভেসে যেতে পারে। আগেও অনেক বন্যার সম্মুখীন হলেও এবার স্মরণাতীত কালের বড় বন্যার সাক্ষী দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের মানুষ। সাতকানিয়ায় অনেক মানুষ বন্যা পরিস্থিতির স্বীকার। বর্তমানে সাতকানিয়া পৌর সদর, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন, কেওচিয়া, ছদাহা, বাজালিয়া, দপুরানগড়, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, ঢেমশা, নলুয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইষ ও চরতী ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করাতে বিপর্যস্ত মানুষ। ধীর গতিতে নামছে ব্যানার পানি, বাড়ছে কষ্ট। অনেক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। নিখোঁজ ও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি। অনেক ঘরেই চুলা জ্বলেনি গত এক সপ্তাহ। শুকনো মুড়ি–চিড়া খেয়েই খিদে মেটাচ্ছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কয়েক লাখ বানভাসি মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ–দুর্বিপাক অনেক সময় মানুষকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে মহৎ প্রাণ ও ধর্মভীরু করে তোলে। যখনই কোনো বালা–মুসিবত বা বিপদ–আপদ পৃথিবীতে নেমে আসে, তখন মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ পায়। তাই অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো দলমত–নির্বিশেষে সব শ্রেণি–পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষের অবশ্যকর্তব্য। বিপদের সময় বানভাসি মানুষের সেবায় এগিয়ে এসে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বিপদগ্রস্ত লোকেরা সাহায্যের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে খুবই উপকৃত হয়। যাঁরা অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, অভাবী, গরিব–দুঃখী এবং অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানহীন মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষকে ত্রাণসাহায্য করে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই তো সময়। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বিত্তবানেরাও আর্তমানবতার কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যাঁর যেভাবে সুবিধা হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর্থিক সাহায্য–সহযোগিতা প্রদান করুন। বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর, সহায়–সম্পদ ও জীবন–জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বসতভিটা, জমি–জিরাত ও ফল–ফসল নিশ্চিহ্ন ও বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত অঞ্চলের অসহায় বানভাসি মানুষ কতটা দুঃখ–কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার এই বন্যা পরিস্থিতি ঠেকাতে। আসুন বানভাসির পাশে দাঁড়াই।