চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ভ্যাট কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে উন্নয়ন দ্রুত দৃশ্যমান হয়, আর সেই উন্নয়ন ভোগ করে নাগরিকরা। ভ্যাট দিবসের সকল স্তরের করদাতাদের ভ্যাট প্রদানে উৎসাহিত করার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক ও সুশৃঙ্খল দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
গতকাল নগরীর একটি হোটেলে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ, ২০২৫ উপলক্ষে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি মেয়র এসব কথা বলেন।
সিটি মেয়র আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালু হয়। আজ তিন দশক পর দেখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজস্ব খাতকে যে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে, তা এখন জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট কর আদায়ের প্রায় ৩৮ শতাংশই আসে ভ্যাট থেকে, যা একক সূত্র হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব অবদান। শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে ভ্যাটই এখন সরকারের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক হাতিয়ার। ভ্যাটের এই শক্তিশালী অবদান প্রমাণ করে যে ১৯৯১ সালে নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী ও দূরদর্শী।
ডা. শাহাদাত বলেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কল্যাণে যেসব পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপকৃত করে, সেগুলোকে মূল্যায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। ভ্যাটের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ডিজিটালাইজেশন আজ দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিএনপি সরকারের আমলে প্রবর্তিত ভ্যাট ব্যবস্থা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে টেকসই করেছে, রাজস্ব প্রশাসনকে আধুনিক করেছে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়িত্ব দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দল মত নির্বিশেষে এই ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
সবাইকে রাষ্ট্রের প্রাপ্য রাজস্ব প্রদানের আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, ভ্যাট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকারের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, যা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতীয় ঋণ পরিশোধের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা ও বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে রাজস্ব অবদান রাখে। ব্যবসায়ী সমাজকে উদ্দেশ্য করে মেয়র যথাযথ ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে ব্যবসা পরিচালনার আহ্বান জানান।
কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার শওকত আলী সাদীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাস্টমস, এঙাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, কর অঞ্চল–১, চট্টগ্রামের কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ, কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার মো. ফজলুল হক, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন। ‘সময়মত নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’ ভ্যাট দিবসের এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এই সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি, চট্টগ্রামের মহাপরিচালক ড. আবু নূর রাশে আহম্মেদ।
সভাপতির বক্তব্যে কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রামের কমিশনার শওকত আলী সাদী বলেন, আধুনিক, স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে হলে ভ্যাট প্রদানের বিকল্প নেই। ভ্যাট আদায় বাড়াতে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, অনলাইনে দাখিলপত্র প্রদান, অনলাইনে কর পরিশোধসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সপ্তাহব্যাপী শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটে বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘মান্থ অব রেজিস্ট্রেশন’ ঘোষণা করে। এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভ্যাট নিবন্ধন প্রদানে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট প্রথম স্থান অর্জন করে। এ সময় মোট ৭ হাজার অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। শুধু নিবন্ধন গ্রহণ করা নয়, নিবন্ধন গ্রহণের পরবর্তী মাস থেকে রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যথাযথ ভ্যাট পরিশোধ করতে আহ্বান জানাই।












