ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন

| মঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চলমান উচ্চমূল্যস্ফীতির মধ্যেই শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূসক বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও ওষুধ, এলপি গ্যাস, মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের মত প্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও কর বাড়ল। ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে এ সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দি এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এর ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর শর্ত হিসেবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে গ্রাহকের ওপর এই করের বাড়তি চাপ, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ককর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। আর এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলেন, ‘সরকার খালি কর বাড়ানোর তালে আছে, আয় বাড়ল কিনা তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। একে তো মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নিচে নামে না, এর মধ্যে আবার এই ভ্যাট বাড়ানোতে অবশ্যই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। আমরা যাবো কই? আমাদের চাপ তো আরও বাড়ল।’ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ বলছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষায়, ‘সরকার রাজস্ব বাড়াতে চায়, ভালো কথা। কিন্তু, সেটা বাজেটে করা যেত। এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে মানুষ পিষ্ট। এখন এই ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।’

শুল্ককর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, এ পদক্ষেপে নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না’। কর আদায়কারী সংস্থা এনবিআরও একই সুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছিল, মূল্যস্ফীতিতে ‘প্রভাব পড়বে না’। এদিকে, শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি হলেও এর খুব বড় প্রভাব পড়বে না বলে মনে করে সরকার। সরকারের মতে, এ প্রভাব হবে খুবই ন্যূনতম। রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের এই অবস্থানের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এ বছর (অর্থবছর) পাঁচ মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপের কারণে বা তাদের শর্তের কারণে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানেও অর্থনীতিবিদরা আছেন। আমরা আইএমএফের কথাটাইবা কেন নেব? তাঁরাও তো বোঝেন কী কাজটা করতে হবে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা খুবই দরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যদি না থাকে, তাহলে আপনি নিজেই দেখবেন যে টাকার মান কমে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের অনুপাতে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ (ট্যাক্স জিডিপির রেশিও) বাড়াতে হবে। এটা এমন জায়গায় চলে গেছে, এটা টেকসই নয়।’ প্রেস সচিব বলেন, সরকার চাচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা স্থিতিশীল করতে, ঠিক করতে; এটি দেশের জন্যই ভালো হবে। তবে, এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “যেসব পণ্যে ট্যাক্স বেড়েছে, সেগুলোর দাম তো বাড়বে। কোনো ধরনের বাস্তবতায় এটা (প্রভাব পড়বে না) তো হয় না। প্রভাব পড়বে না বলা হলে, বোধ হয় তা বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হয়। জাহিদ হোসেন বলেন, ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, এসব পণ্যের ওজন কম, দর কম, সেজন্য হয়ত মূল্যস্ফীতির হারের উপর খুবই কম প্রভাব পড়বে।

আসলে পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই এ বিষয়ে সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে