ভোর রাতে হেফাজতের পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি

সবাই বাবুনগরীর আত্মীয়স্বজন ।। শফীর মৃত্যুর আগে গঠিত কমিটিই বলবৎ থাকবে : রুহী

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। এতে সংগঠনের শীর্ষ পদে আমীর হিসেবে রাখা হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে। যিনি বিলুপ্ত কমিটিতেও একই পদে ছিলেন। গত রোববার রাত পৌনে ৩টার দিকে প্রথমে তিন সদস্যের এবং চারটার দিকে আরো দুইজনকে সম্পৃক্ত করে ঘোষণা করা হয় আহবায়ক কমিটি। এর আগে রাত ১১ টায় ভিডিও বার্তায় কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা করেন বাবুনগরী। এদিকে জুনায়েদ বাবুনগরী কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা দেয়ার পর প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারিরা হেফাজতে ইসলামের কমিটি করার ঘোষণা দিলেও সেখান থেকে সরে এসেছেন। এখন তারা দাবি করছেন, শাহ আহমদ শফী বেঁচে থাকা অবস্থায় ২০১ সদস্যের একটি কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। যেখানে শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর যৌথ স্বাক্ষর রয়েছে। শেষ মুহূর্তে হাটহাজারী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হলে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয় নি। বিদ্যমান পরিস্থিতে অপ্রকাশিত সেই কমিটিকেই কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন শফীপন্থী হেফাজত নেতারা।
এদিকে রাত পৌনে ৩টার দিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথমে ঘোষিত তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুগরীকে উপদেষ্টা, জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমীর ও আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করা হয়। এতে বলা হয়, তিন সদস্যের আহবায়কগণ অতি দ্রুত হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন। এর ঘন্টাখানেক পর একই কমিটিতে সদস্য হিসেবে সালাহ উদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীকে যুক্ত করে কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ জন করা হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞাপ্ততে বলা হয়, চলমান অস্থির ও নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা পরবর্তী উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শক্রমে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হল।
এদিকে ঘোষিত কমিটির পাঁচজনের মধ্যে মিজানুর রহমান চৌধুরী ছাড়া বাকি চারজনের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। ফলে বিষয়টি নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। এছাড়া মুহিব্বুল্লাহ বাবুগরী ও জুনায়েদ বাবুগরী সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে হওয়ায় চলছে নানা আলোচনা।
এ বিষয়ে আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মধ্যরাতে যে কমিটি করা হয়েছে সেটা বিভ্রান্তি ও প্রহসনমূলক। রাত ১২ টায় বাবুনগরী সাহেব বলেছেন, কমিটি ঘোষণা করবেন। ওনার বক্তব্যের ১০ মিনিটের মাথায় ওনার প্রচার সম্পাদক বলেছেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি হয়ে গেছে। আবার রাতে ওনাদের মহাসচিব বলছেন, বাবুনগরীর নির্দেশে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করছি। তাহলে এখানে একটার সঙ্গে আরেকটার তো কাউন্টার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের কমিটির চারজনই ফকিছড়ির। তাই অনেকে এটাকে ‘ফটিকছড়ি সমিতি’ বলছে। হেফাজতের কমিটি তো ফটিকছড়িকেন্দ্রিক হতে পারে না। তাছাড়া এরা সবাই বাবুনগরীর আত্মীয়স্বজন। আত্মীয়করণ দিয়ে তো সংগঠন হতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা, আহবায়ক কমিটিতে আমীর-উপদেষ্টা থাকে না।
এই অবস্থায় শফীপন্থী হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতারা কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের দুই মাস আগে একটি কমিটি করা। সেখানে আমীর ছিলেন আহমদ শফী হুজুর এবং বাবুনগরী মহাসচিব। সেখানে বাবুনগরী শীল মোহর দিয়ে স্বাক্ষর করেন। সেটাই বলবৎ থাকবে। হুজুর যখন মারা গেছেন এখন আরকজন আমীর বাছাই করা হবে এবং বাবুনগরী থাকতে চাইলে থাকবেন। থাকতে না চাইলে অন্য কেউ হবেন। এ বিষয়ে আমরা শীগ্রই বসে সিদ্ধান্ত নিব।
জানা গেছে, দেশের শতাধিক কওমী মাদরাসার শিক্ষকদের নিয়ে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম। শাহ আহমদ শফী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা থেকে আমৃত্যু সংগঠনের সর্বোচ্চ আমীর পদে দায়িত্ব পালন করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। এরপর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করা হয় সংগঠনটির ১৫৩ সদস্যের কমিটি। যেখানে প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলেসহ তার অনুসারি ৪০ থেকে ৫০ জনকে বাদ দেয়া হয়। যারা পূর্বের কমিটিতে শীর্ষ পদে ছিলেন।
২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরের লালদীঘি মাঠে ‘ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল’সহ বিভিন্ন দাবিতে সমাবেশের ডাক দিয়ে আলোচনায় আসে সংগঠনটি। এরপর ২০১৩ সালের মে মাসে শাপলা চত্বর ঘটনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় আসে হেফাজত ইসলাম। সর্বশেষ গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করে হেফাজত ইসলাম। এ সময় সহিংসতায় জড়িয়ে পরে সংগঠনটির কর্মীরা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে প্রাণহানিও ঘটে। এ ঘটনায় দায়ের হয় মামলা। পরবর্তীতে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুল হক এক নারীসহ আটকের পর সমালোচিত হয় দলটি। গত ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর সংগঠনটির আরো অন্তত ১৫ জন নেতাকে আটক করে পুলিশ। নাশকতায় জড়িত সংগঠনটির আরো একাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে পুলিশ জানায়। গ্রেপ্তার এড়াতে যারা আত্মগোপনে আছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে দুই মামলা
পরবর্তী নিবন্ধজাতিসংঘ-এসকেপের সভায় চার দফা প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর