সন্ধ্যা নামলেই প্রত্যেক বাড়ি থেকে পড়ার আওয়াজ শোনা যেত বছর আট আগেও। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার আগের দিন হলে তো কথায়ই নেই। সকলের সেকি পড়াশোনার আওয়াজ। ভাইবোন পাল্লা দিয়ে পড়তো। কার থেকে কে কত জোরে পড়তে পারে? ভাত খেতে ডাকতে ডাকতে মা ক্লান্ত হতেন কিন্তু পড়া থেকে কেউ উঠতো না। বেশ রাত করে ভাত খেতো। ভোরেও থাকতো পড়ালেখার আওয়াজ। মায়েরা রান্না ঘরে, সন্তানরা পড়ার টেবিলে পড়ছে। কী সুন্দর দৃশ্য! হঠাৎ বদলে গেলো সব। এখন পুরো সন্ধ্যা জুড়ে মায়েদের চিৎকার শোনা যায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। পড়তে বসো, পড়তে বসো, পড়ছো না কেন? কিন্তু সন্তানরা পড়তে বসে না। কোথায় হারিয়ে গেলো সুন্দর সেই সব দিন? সুন্দর নিয়ম, কানুন, শিষ্টাচার, ভদ্রতা, লজ্জা, মানবিক গুণাবলি? কোথায়? হঠাৎ মোবাইল ও প্রযুক্তি জায়গা করে নিলো এই সময়ের ভেতর। আসলে বাবা মায়ের হাতেও আগে ছিলো না মোবাইল। অফুরন্ত সময় দিতেন তারা সন্তানকে। সমস্ত কাজ সেরেও বাবা বাড়ি ফিরে সন্তানদের পাশে বসে পড়াশোনা দেখতেন, বুঝিয়ে দিতেন পড়া অথবা মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন পড়ো বাবা, পড়ো, অনেক বড় মানুষ হতে হবে। ভালোবাসার জালে আটকে যেতো সন্তানদের মন, আবেগ। এখন কয়জন বাবা মা সন্তানকে সময় দেন? কয়জন বাবা মা পাশে বসেন? কয়জন বাবা মা মোবাইল না ধরে সন্তানকে পড়াতে বসান? কয়জন?
গ্রামের ছেলেরা সন্ধ্যায় বাইরে বের হতো না তখন। এখন অনেকে বাইরে থেকে ফেরে রাতে। তাহলে পড়াশোনা করছে কখন? গ্রামে এখন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কিশোর, যুবক ছেলেরা আড্ডা দিয়ে বেড়ায় বিভিন্ন গলিতে, পুকুর পাড়ে ও মাঠে। এরা বড় হলে সমাজে কী অবদান রাখবে? সন্তানের যত্নে এখন বাবা, মাকেই আবার আগে সময় বের করতে হবে বেশি, কঠোর হতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা অনেক বড় শিক্ষা। সন্তানকে ধর্মীয় বিষয়ে বেশি বেশি শিক্ষা দান করুন। নামাজ পড়তে শেখান। নৈতিকতা শেখান। আগে স্যারদের দেখলে ছাত্র ভয়ে দৌড়ে পালাতো, সাইকেলে থাকলে তাড়াতাড়ি সাইকেল থেকে নেমে গিয়ে সালাম দিয়ে সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতো। এখন সাইকেল থেকে নামেও না অনেক শিক্ষার্থী। বিনয়, নৈতিকতা সব কেমন যেন হারিয়ে গেছে। আসুন একেবারে সবটাই শেষ হবার আগেই আবার আগের মতো নতুন করে পুরাতন কিছু ভালো ফিরিয়ে আনি। আনি ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়ার সোনার কাঠি। যার মাঝে শিক্ষার আলোর পরশ লাগিয়ে জাগিয়ে তুলি শিশু, কিশোর, যুবকদের। উপহার দিই ভালো গল্পের বই, নৈতিকতা মূলক ধর্মীয় বই, কবিতার বই, গল্পের বই ও ভালো শিক্ষণীয় উপন্যাস। মনের আলো ও চোখের আলো জাগ্রত করে পড়ার টেবিলে আওয়াজ তুলতে তাদের সজাগ করে তুলি। মোবাইল আসক্তি নয়, পরিবারের ভালোবাসার জালে আটকে রাখি সকলকে। রাত জাগানিয়া না হয়ে সবাইকে করে তুলি স্নিগ্ধ মিষ্টি সুরের ভোরের পাখি।