ভোট চোরের আস্তানা ভেঙে দিতেই বিদেশিরা বাংলাদেশে আসছে : খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ভোট চোরের আস্তানা ভেঙে দিতেই বিদেশিরা বাংলাদেশে আসছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ‘শুধু বিদেশিদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে না’ মন্তব্য করে সরকার পতন আন্দোলনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের তৈরি থাকার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া ক্ষমতা হারালে প্রধানমন্ত্রীকে ১০ বছরের অধিক সময় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে থাকার ভাড়া দিতে হবে বলেও ঘোষণা দেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক মহাসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মদ সড়কে এ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা এদেশে বিদেশিদের আনাগোনা লক্ষ্য করেছেন। সাংবাদিকরা বিদেশিরা কে কি বলল জিজ্ঞেস করে। আমি বলি আগে জিজ্ঞেস করেন, কেন তারা বাংলাদেশে আসছে? এরা কি ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানে গিয়েছে। তাহলে কেন বাংলাদেশে আসছে? দেশের ভোট চোরের আস্তানা ভেঙে দেয়ার জন্য আসছে বিদেশিরা।

খসরু বলেন, বিদেশিরা যাওয়ার পর কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতা নিজেদের কর্মীদের মনোবল ঠিক রাখার জন্য বলে, ওরা (বিদেশিরা) তো এটা বলে নাই, সেটা বলে নাই।

খসরু বলেন, বিদেশি সরকারের মন্ত্রীরা এদেশে আসছে। প্রধানমন্ত্রী খুব একটা রাজি নেই। তারপরও তারা আসছে কিন্তু। কি বলতে আসছে? বলছে, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য অংশীদারিত্বমূলক একটি নির্বাচন দেখতে চায়। মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেখতে চায়। তিনি বলেন, বেকুব কাকে বলে? কোনো একটি দেশের মন্ত্রী এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সভা করে প্রধানমন্ত্রীকে তার মুখের উপর সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা যখন বলে তখন তো আত্মহত্যা করা দরকার। কি আশ্চর্য কথা! আমেরিকান মন্ত্রী এসে প্রধানমন্ত্রীকে তার অফিসে গিয়ে বলছে আমরা এটা দেখতে চাই। এটা অন্য কোনো দেশে হবে? না।

তিনি বলেন, সরকার র‌্যাবের ওপর স্যাংশন প্রত্যাহার করতে বলেছে। জবাবে বিদেশিরা বলেছে, র‌্যাবের হাতে যেসব খুন, গুম হয়েছে আগে সেগুলোর বিচার করতে হবে। অর্থাৎ যারা যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার চাচ্ছে। তাহলে বিচার যখন শুরু হবে, কে, কারা গুমখুনের নির্দেশ দিয়েছে, সেটা আসবে। তাহলে কারা কারা বিচারের আওতায় আসবে সেটা আপনারা খুঁজে বের করুন।

খসরু বলেন, বিদেশিরা যতবার প্রেসের সঙ্গে কথা বলেছে প্রত্যকবারই তারা বলেছে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চান। এখন আমাদের তৈরি হতে হবে। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশিদের সমর্থন ভালো জিনিস। কিন্তু শুধু বিদেশিদের সমর্থনের ওপর বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে না। তবে বিদেশিদের সমর্থন সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। সাধারণ মানুষ খুশি হয়। এ সমর্থনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু মূল দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এবার রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ কি হবে সেটা বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে আছে। এই ফ্যাসিস্ট, ভোট চোর, দখলদার সরকারকে তাড়ালে, শুধু শেখ হাসিনাকে তাড়ালেই বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হবে না। তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়ে দেশজাতির সামনে, সারা বিশ্বের সামনে পরিষ্কার করে দিয়েছেন, আগামীর বাংলাদেশ কোন পথে চলবে। আগামীর বাংলাদেশের চরিত্র কি হবে সেটা ৩১ দফায় পরিষ্কার বলা আছে।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপির চেয়ে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল এখন বাংলাদেশে নেই। প্রধানমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন শুনেছি, প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে গেলে উনি কোথায় থাকবেন? একটা কথা বলতে চাই, তিনি জনগণের ভোট না নিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে, জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে যে ১০ বছরেরও অধিক সময় গণভবনে বসে আছেন, এটার ভাড়া দিতে হবে। গণভবনের ভাড়া দিতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে এক দফার ডাক এসেছে। অর্থাৎ সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। এক দফায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বিদায় হও। এই দফায় শুধু বিএনপি নয়, যুগপৎ আন্দোলনে যারা আমাদের সাথে আছে এবং যারা বাইরে আছে সবাই রাস্তায় নেমেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সংগঠনও রাস্তায় নামার অঙ্গীকার করছে।

তিনি আরো বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগের সাথে তাদের হালুয়ারুটির পার্টি ব্যতীত কেউ নাই। এসব হালুয়ারুটি পার্টি আন্দোলন কোনদিকে যায় তার অপেক্ষা করছে। তাই তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। দেশের মানুষ প্রত্যেক রাজনীতিবিদকে ও তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা কি দেশের জনগণের পক্ষে যাচ্ছে নাকি হালুয়া রুটির পক্ষে যাচ্ছে? এবার হালুয়ারুটিতে কাজ হবে না। আগেও বলেছি, খেলা শেষ।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করবে তাদের সংসদ সদস্য ও সরকার। তাই এর বাইরে আর কোনো সুযোগ নাই।

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, মানুষ জেগেছে। মানুষ চায় ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা। এ সরকারকে অপসারণ করে একটি দল নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা হোক। সারা দেশের মানুষ হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। তিনি বলেন, সরকারের পদত্যাগের পর দেশে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং সেই পরিস্থিতিতে বিএনপি জিতবেই। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ সবসময় আন্দোলনমুখী। আন্দোলন ছাড়া কোনো সফলতা অর্জন করতে চায় না। সরকার পতনের এক দফা দাবি মানুষের মনে প্রোথিত হয়েছে।

মীর মো. নাছির উদ্দিন বলেন, এ চট্টগ্রাম মাওলানা ইসলামাবাদী ও কাজেম আলী মাস্টারের। এখান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে। এই চট্টগ্রাম থেকেই আগামী দিনে এ সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে আবার গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করব। তিনি বলেন, আমরা পদত্যাগ করতে বলব না, আমরা তাদের পদত্যাগে বাধ্য করব।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এক দফার সংগ্রাম চলবে। এ সরকারকে দেশের মানুষ এবং বিদেশিরা বিশ্বাস করে না। দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় আসা এ সরকারকে সবাই বলে ভোট চোর, কিন্তু আমি বলি ডাকাত সরকার।

এস এম ফজলুল হক বলেন, সরকারকে আমরা বিদায় দিতে চাই। আপনারা রাজি আছেন? চলেন ঐক্যবদ্ধ হই।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আজকের মহাসমাবেশ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এ সমাবেশ প্রমাণ করে দেশের মানুষ আর এক মুহূর্তও এ সরকারকে চায় না। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। পতন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ফিরে যাব না।

ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব আমরা।

হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, তারা আবার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলামামলা করছে। আমরা মামলা মাথায় নিয়েও সমাবেশে যোগদান করব। আমরা বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের সৈনিক। আমাদের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা সম্ভব না। যে কোনো মূল্যে ঘোষিত এক দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই হবে ‘ইউ উইল টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে কেউ নিরাপদ নয়। তাই দেশের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনব। আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। রাজপথে আছি রাজপথে থাকব।

এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামী লীগ ছলচাতুরীর মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আরো একটি নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

আবু সুফিয়ান বলেন, যতই কায়দা করেন না কেন সময় শেষ। যেতে হবে। কোনো কৌশল কাজে আসবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি ‘বেলতলায়’ যাবে না
পরবর্তী নিবন্ধভারতকে হারিয়ে ইতিহাস নারী ক্রিকেট দলের