ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় টিকতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

| রবিবার , ১৬ জুন, ২০২৪ at ৯:২২ পূর্বাহ্ণ

জনগণের ভোট চুরি করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভোট চুরি হয় ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। মাত্র ২২ পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল সেখানে। কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। জনগণের ভোট চুরি করলে কেউ কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ এই ব্যাপারে খুব সচেতন।

গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে কৃষক লীগের আয়োজনে আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধনের আগে বক্তব্য দিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগসহ বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সেই সময় ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করে। মাত্র চার কার্যদিবস সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তার আগে সেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়।

এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি এবং জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে। পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ২১ বছর পর সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। খবর বিডিনিউজের।

২০০৮ সাল থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে বলে বিরাট গর্ব ছিল। কিন্তু কী দেখা গেল? জনগণের আন্দোলনের মুখে ৩০ মার্চ তাকে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে হলো। অর্থাৎ ভোট চুরির অপরাধেই কিন্তু তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকেও ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আজকে যারা ভোটের অধিকারের কথা বলে, যখন দেখি বিএনপি নির্বাচনের কথা বলে, আমার খুব হাসি পায়। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এই দেশের সমস্ত মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে যাত্রা শুরু, অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য। আবার একাধারে সেনাপ্রধান এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রহসন করে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে অন্যদের সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, মসনদে বসেই দল গঠন, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দিয়ে যে দলটি গঠন করে, তাকে আবার জিতিয়ে আনার জন্য ভোট চুরির একটা প্রক্রিয়া এই দেশে শুরু করেছিল। আবার জিয়াউর রহমানের পরে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে যখন ক্ষমতায় এরশাদ আসে, তখনই এ দেশের জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশের কৃষকশ্রমিকরা সবসময়ই অবহেলিত থেকে গিয়েছিল। এরপর আসল খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া আসার পর দেখা গেল শুধু জনগণের ভোট চুরিই না, এদেশের কৃষকের ভাগ্য নিয়েও ছিনিমিনি খেলা চলছে, সার পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের পরে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

২০১৩১৪ সালে বিএনপিজামায়াতের টানা হরতালঅবরোধে যে সহিংসতা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে শুধুমাত্র আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়নি। ওরা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছিল। রাস্তার পাশে যত গাছ সব কেটে ফেলা হয়েছিল।

কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পর পর সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। কৃষিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং সেই সংবিধানে কীভাবে আমাদের দেশটাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায় এবং আমাদের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষকে কীভাবে বাঁচানো যায়, সেই দিকনির্দেশনাও সেখানে রয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল নির্ভরশীল হচ্ছে কৃষির উপর। কৃষি অর্থনীতিটাকে আমরা আরো উন্নত করে আমরা শিল্পায়নে যাব। কৃষিকে সঙ্গে নিয়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নটাই আমাদের বেশি গড়ে উঠবে। আমাদের কাঁচামাল তো এখান থেকেই আসবে। কৃষি জমি রক্ষায় সরকার দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই (অর্থনৈতিক) অঞ্চল করার উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যবসায়ী যেখানে সেখানে একটা জমি কিনে আর একটা ইন্ডাস্ট্রি করে ফেলে, আমাদের কৃষি জমি নষ্ট করে দেয়। আমাদের আছে তিন ফসলের জমি, কোনোভাবেই এটা নষ্ট করা যাবে না। সেখানে কেউ কোনো ইন্ডাস্ট্রি করতে পারবে না। যত্রতত্র যেন কেউ জমি নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি।

নগরায়ণের চাপে ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয় এবং ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ৭৪ সালে নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্য কিন্তু বাংলাদেশে আসতে দেওয়া দেয়নি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হলো। সেটার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যেভাবেই হোক মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আর সেটাও যখন সফল হয়নি, তার পরের ঘটনা হলো ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যেখানে সেখানে কোরবানি করে জায়গা যেন নষ্ট না হয়, নোংরা না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে; যার যার নিজের আবাসস্থল থেকে শুরু করে সব জায়গায় নজর রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাজারে প্রচুর গরু, দামও কমতির দিকে
পরবর্তী নিবন্ধলাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান