সাড়ে তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেছে আদালত। একই সাথে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন এ আদেশ দেন। এ সময় কয়েকশ বিএনপি নেতাকর্মী ডা. শাহাদাত হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দেন।
নির্বাচন পরবর্তী কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেছিলেন তৎকালীন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেই অনুযায়ী তিনি দায়িত্বও পালন করে আসছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে রেজাউলকে অপসারণ করে তার জায়গায় চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব (প্রশাসক) দেওয়া হয়। ঠিক এ পরিস্থিতিতে ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছে আদালত।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে আদালত। এ জন্য ঘোষিত ফলাফল বাতিল ঘোষণা করা হয়। সেই সাথে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা, এরপর তাকে অপসারণ, তারও পরে বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক নিয়োগ সবই করেছে নির্বাহী বিভাগ। অন্যদিকে ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছে বিচার বিভাগ। এইখানে জটিলতা থাকতেই পারে। তবে এমন পরিস্থিতিতে দুই বিভাগ সমন্বয় করবে বলে মনে করি এবং সেই অনুযায়ী রেজাল্ট দেবে। আমি মনে করি এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বিচার বিভাগ।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছিলেন বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ ও নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৫৩ এর ২ উপধারা মোতাবেক তিনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও নির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিমসহ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া অপরাপর পাঁচ মেয়র প্রার্থীকে (মো. জান্নাতুল ইসলাম, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও আবুল মনজুর) বিবাদী করা হয়।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন পরবর্তী ফলাফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায় নীতির পরিপন্থী। নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী আচরণবিধি ২০১৬ এর ৩, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১ ও ২৭ ধারা পুরোপুরিভাবে লক্সঘন করেছেন। এছাড়া নির্বাচন থেকে যাবতীয় সুযোগ ও অধিকার পাওয়া সমীচীন থাকলেও তা পাননি বলে উল্লেখ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
এজাহারে বলা হয়, ২ থেকে ৪ নম্বর বিবাদি (চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার) নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টির কোনো প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যেটি নির্বাচনী বিধিমালা পরিপন্থী।