ভোটের পর পাকিস্তানে জোটের জটিল হিসাব

ইমরান ও নওয়াজ শরিফ দুই জনেই জয় দাবি করেছেন বিলাওয়াল বলছেন তাকে ছাড়া সরকার হবে না

| রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। গতকাল রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত শেষ হয়নি ফল ঘোষণা। অন্তত ১০টি আসনের ফলাফল এখনো অপেক্ষমান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পেয়েছেন ইমরান খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু তারপরও তাদের জন্য সরকার গঠন অনিশ্চিত। কে কীভাবে সরকার গঠন করবে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।

শুক্রবার ইমরান এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, উভয় ভোটে জয় দাবি করেন। ইমরানের কারাদণ্ড হওয়ায় বর্তমানে পিটিআই প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন গহর খান। যিনি ইমরানের আইনজীবীর দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি পাকিস্তানের ‘সব প্রতিষ্ঠানকে’ তার দলের ম্যান্ডেটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যদি শনিবার রাতের মধ্যে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা না হয় তবে পিটিআই রোববার (আজ) দেশজুড়ে সরকারি দপ্তরগুলোর সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফ শুক্রবার বলেন, ভোটে তার দল এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে এবং তারা জোট সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-এর চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোজারদারি বলেছেন, তার দলকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রে এবং পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তান প্রদেশে কোনও সরকার গঠন করা যাবে না। গতকাল পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন হওয়া উচিত। আমি বিদ্বেষ ও বিভক্তির রাজনীতির অবসান চাই।

পাকিস্তানে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভোটের পর পিপিপি হলো একমাত্র দল যাদের চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। সম্পূর্ণ ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। তবে পিপিপিকে বাদ দিয়ে কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানে সরকার গঠন সম্ভব হবে না।

পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত আসন, যার মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি অমুসলিমদের জন্য। এবার একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় মোট ২৬৫ আসনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে দলগুলোকে। নির্বাচনে বিজয়ী হতে অন্তত ১৩৪টি আসন পেতে হবে তাদের।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের তথ্য বলছে, ভোট হওয়া ২৬৫ আসনের মধ্যে সর্বশেষ তথ্যমতে, ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তারা জিতেছেন ৯২ আসনে। এরপর ৭১টি আসনে জিতেছে রয়েছে নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ (পিএমএলএন)। ৫৪ আসনে জিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি। তবে জিও নিউজের খবরে বলা হচ্ছে, ইমরানপন্থি স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৯৪ আসনে। পিএমএলএন পেয়েছে ৭৪ এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৪ আসন। ১৭টি আসনে জিতে এমকিউএমপি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এছাড়া, অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন নয়টি আসনে। আবার, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইমরান সমর্থক প্রার্থীরা ৯৬ আসনে, পিএমএলএন ৭৫ এবং পিপিপি জিতেছে ৫৪ আসনে। এখনো ১০টি আসনের ফলাফল পাওয়া যায়নি।

নিয়ম অনুযায়ী কোনো দল যদি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় তাহলে সংরক্ষিত আসন ছাড়াই অন্তত ১৩৪টি আসনে জয় পেতে হবে এবং সংরক্ষিত আসনসহ পেতে হবে ১৬৯টি।

অর্থাৎ, এবারের নির্বাচনে কোনো দলই যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, তা নিশ্চিত। ফলে সরকার গড়তে জোট গঠন অবধারিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইমরানপন্থিদের সরকার গঠন আটকাতে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে রাজি হয়েছে নওয়াজ ও বিলওয়াল ভুট্টোর দল। পিএমএলএন প্রেসিডেন্ট ও নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ বিলওয়াল ভু্‌টে্টা ও তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বাসায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শাহবাজ শরিফ। এসময় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন পেয়েও বেশ বিপাকে রয়েছেন ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরা। কারণ, দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তারা সংরক্ষিত আসন পাবেন না। ফলে পিটিআই’র পক্ষে সরকার গঠন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, স্বতন্ত্ররা তিন দিনের মধ্যে যেকোনো দলে যোগ দিয়ে সরকার বা বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন। এক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে এসেছে এমডব্লিউএম নামে একটি দল। দলটি এ পর্যন্ত মাত্র একটি আসনে জিতেছে। তবে বিজয়ী ইমরানপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এমডব্লিউএমের ছাতার নিচে জড়ো হয়ে সরকার গঠন করতে না পারলেও শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমান্তের অপরাধীদের হাতে ভারী অস্ত্র যাওয়ার শঙ্কা!
পরবর্তী নিবন্ধ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সংগ্রহ করা যাবে চবি ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র