শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ভোটের দিন মাঠ ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার রক্ত ঝরবে। তবু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাব। কাউকে ভয় করে রাজনীতি করিনি। করবও না।’ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ‘অভিযোগ আছে, অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রচারণায় সরব দেখা গেলেও ভোটের দিন খুঁজে পাওয়া যায় না। এবারও কি তাই হবে?’ গতকাল সকালে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ডা. শাহাদাত নগরে বহিরাগতদের অবস্থান বাড়ছে অভিযোগ করে বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। তারা রাউজান, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর লোকদের সাথে বৈঠক করছে। আমরা কেবল ৪১টি ওয়ার্ডে মিটিং করেছি।’
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি তাদের (আওয়ামী লীগ) বড় বড় নেতা হাত তুলে বলেছেন আমরা ভোটের সেন্টারে সেন্টারে থাকব। কিভাবে তারা থাকবে? তারা কি এখানকার ভোটার? তারা কিভাবে কমিউনিটি সেন্টারে মিটিং কর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য আমরা সেন্টারে থাকব’? তাহলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে বাইরে থেকে এসে যেভাবে ভোট ডাকাতি করছে তারা সে পাঁয়তারা করছে? এ বিষয়ে আমরা বারবার বলেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। না হয় নিরাপদ ভোটের যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলাম সেটা থাকবে না।’
ডা. শাহাদাত বলেন, আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে উদ্বুদ্ধু করেছি। কিন্তু কিছু মাস্তান, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী অফিসারের কারণে পরিবেশটা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। সিইসি চট্টগ্রামে এসেছিলেন, উনার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আশা করেছিলাম। কিন্তু পাইনি। বরং এখন কেউ ঘরে থাকতে পারছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং সেন্টারে না যাওয়ার জন্য ও এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা হুমকি দিয়ে বলছে, আমরা যেন কাউকে না দেখি, দেখলে গ্রেপ্তার করা হবে।
ডা. শাহাদাত বলেন, গত পাঁচ দিন যাবত লক্ষ্য করছি, থানায় থানায় সাজানো ও গায়েবি মামলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ছয় মাস থেকে একবছর আগে এমন মামলা দেখেছিলাম। ১৯ জানুয়াারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি থানায় ১০ টির বেশি মামলা করেছে। সেখানে এক হাজারের অধিক আসামি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ এর অধিক গ্রেপ্তার করেছে। শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। দক্ষিণ বাকলিয়া ১২ বছরের শিশুসহ মহিলা দলের মুন্নিকে ধরে নিয়ে গেছে। এমন জঘন্য অমানবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিমকে তার ছেলেসহ ঘর থেকে চকবাজার থানা পুলিশ নিয়ে গেছে। রাত দেড়টায় চকবাজার থানায় গিয়ে অনেক অনুরোধ করে নিয়ে আসলাম।’
ডা. শাহাদাত বলেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বারবার রিক্যুয়েস্ট করেছিলাম, রিটার্নিং অফিসারকে এ যাবত ৪০টি অ্যাপ্লিকেশন করেছি, কিন্তু সুরাহা হয়নি। আমরা বলেছি, নির্বাচনকালীন সময়ে যেসব মিথ্যা মামলা করে যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের যেন গ্রেফতার করা না হয়। কারণ মামলাগুলো সাজানো। গ্রেপ্তার করা হলে নির্বাচনে ভোটের অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হবে। গতরাতে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, একটি সুন্দর সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে বলে আশা করেছিলাম। যেখানে মানুষ ভোটের অধিকার খুঁজে পাবে, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এ কনসেপ্ট প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু সে পরিবেশ তারা নষ্ট করেছে। এখান থেকে সিইসিকে বলতে চায়, আর দুই দিন সময় আছে, চিহ্নিত যারা সন্ত্রাসী আছে তাদের গ্রেপ্তার করুন এবং ঘরে ঘরে নিরীহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করুন।’
ইভিএম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত বলেন, নির্বাচন কমিশনে ৯ দফা দাবি দিয়েছি, সেখানে ইভিএম এর কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। ইভিএমের ব্যালট প্যানেলে সুরক্ষা দিতে হবে। ব্যালট প্যানেলে তাদের সন্ত্রাসীরা দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এনআইডি কার্ড ছাড়া কেউ যেন ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না পারে। এজেন্ট নির্বাচন কমিশনের অংশ, তাই এজেন্টকেও সুরক্ষা দিতে হবে, কোনো এজেন্টকে বের করা যাবে না।
এর আগে কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম ও বাকলিয়ার একজন এসআইকে প্রত্যাহার না করলে নির্বাচন বর্জনে দেয়া হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. শাহাদাত বলেন, বাকলিয়ার এসআই জামালকে ক্লোজড করেছে। নেজামের ব্যাপারটাও তারা দেখছে বলে আমাকে কথা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক একরামুল করিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, চাকসু ভিপি নাজিম, এস এম সাইফুল, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আব্দুল মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, জাহিদুল করিম কচি, এম এ হাসেম রাজু, গাজী সিরাজ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম।