বিএনপি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চাইলেও সময় বেঁধে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নারদিয়া সিম্পসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। এই বৈঠকে অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়েও কথা হয় বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনারের গাড়ি বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারের সঙ্গে ছিলেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্লিনটন পোবকে এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি লারা অ্যাডামস।
বৈঠক শেষে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য কত সময় লাগতে পারে তারা (অস্ট্রেলিয়া) জানতে চেয়েছে, পাশাপাশি নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য কী কী পরিবর্তন দরকার–সেগুলো কীভাবে এগুচ্ছে সে বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে। তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে আগামীতে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। নির্বাচন কবে হবে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক সময়ের তো কথা বলেই যাচ্ছি। সময়ের যৌক্তিকতা এখানে যারা স্টেকহোল্ডার আছে, তারা বিবেচনা করবে। আসলে আমরা একটা টাইম ফ্রেম বলছি না– একটা সময় দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছি না। খবর বিডিনিউজের।
বিএনপি নেতা পরক্ষণেই বলেন, আমরা চাচ্ছি সরকার সফলভাবে তাদের কাজগুলো করে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে– এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজটা শুরু হতে হবে। আমি নিশ্চিত সেই কাজগুলো তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) খুব দ্রুত করবে। কারণ একদিকে ফায়ার ফাইটিং করতে হবে এবং অন্যদিকে আমাদের দেশে যে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলো হয়ে গেছে সেগুলো সমাধান করে নির্বাচনি কার্যক্রমের দিকে তাদেরকে যেতে হবে।
গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে আশ্বাস দিয়ে আমীর খসরু বলেন, সমস্ত জাতির প্রত্যাশা যে, এই সরকার জাতির আশা–আকাঙক্ষা পূরণে সমর্থ হবে।
আমরা এই সরকারকে সার্বিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি এবং দিয়ে যাব। বাংলাদেশের মানুষ যে আগামীর বাংলাদেশ তৈরির নতুন স্বপ্ন দেখছে, এটা আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে। এটা কেউ একা করতে পারবে না, জাতির একটা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। সেখানে আমাদের সকলকে এক থাকতে হবে, সেই কথাগুলো আমরা বলেছি। বিএনপির হয়ে বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আন্তর্জাতিক সস্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদও ছিলেন।
আমীর খসরু বলেন, অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনারের সঙ্গে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার সরকার চলে যাওয়ার পরে আমরা কী ভাবছি এবং অন্তর্বর্তী সরকার কী রকম করছে এবং তাদের এক মাস কেমন গেল, আগামী দিনে আমাদের কী প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কী প্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আঞ্চলিক রাজনীতি ও রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়েও আলোচনা হয়। দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা এবং অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিষয়েও আলোচনা হয়।