ভোটের ঘোষণা দেওয়ার আগে ‘আলোচনা না করায়’ বিস্মিত জামায়াত

জুলাই ঘোষণাপত্রে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি : তাহের

| বৃহস্পতিবার , ৭ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ায় বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলছেন, বিস্মিত হলেও জাতীয় স্বার্থে তারা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে চান। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার মগবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর এই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন তাহের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও ইনসাফভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত নির্বাচনের টাইম লাইন (ডিসেম্বরজুন) শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবেন। তা না করায় জাতি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করার দীর্ঘ দিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, আমাদের আমির আগেই বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সেটা একইভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা ইতিবাচক। খবর বিডিনিউজের।

জুলাই ঘোষণাপত্র বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াইসংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের (লগি বৈঠা আন্দোলন) হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেমওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই, যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল। সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

সংস্কারের বিষয়গুলো জুলাই ঘোষণাপত্রে না থাকার কথা তুলে ধরে এই জামায়াত নেতা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এজন্য ছয়টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে দু’পর্বে দুই মাসেরও অধিক কাল যে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশাআকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।

তাহের বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল, তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশের মানুষ জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন জামায়াতের নায়েবে আমির।

অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিমসহ নির্বাহী পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই কারণ চিহ্নিত করলেন মেয়র, সমাধানের নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধআবু সাঈদকে গুলির সেই ভিডিও দেখল ট্রাইব্যুনাল