রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একমত হলেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের সময় ঠিক করার ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে যে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তাদের সুপারিশ নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হওয়া এবং ভোটার তালিকা তৈরি হলে নির্বাচনের তারিখ বলা হবে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল–আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন বলে বাসস জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশে ফিরে ৮ আগস্ট সরকার গঠন করেন ইউনূস। ওই সময়ই এই সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, দেশে আগে সংস্কার দরকার, তারপর নির্বাচন। এর মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বলেছে, তারা সরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত, তবে সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। এরপর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন ইউনূস।
সেখানে একেক দল একেক ধরনের দাবি তুললেও নির্বাচনের ‘সময় সীমা’ নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি। এর মধ্যে রয়টার্সে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
আগামী ভোট নিয়ে দেশে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহলের আলোচনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তার মতামত তুলে ধরলেন। এ সময় রাষ্ট্র সংস্কারে আইএমএফ ইউনূসের সরকারের পাশে আছে জানিয়ে জর্জিয়েভা জানিয়েছেন, এই কাজের জন্য আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দলটি ঢাকা ঘুরে এসে আগামী মাসে আইএমএফ পরিচালনা পর্ষদের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
বৈঠকে ইউনূস বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারে উৎখাত নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তখন জর্জিয়েভা বলেন, এটি একটি ভিন্ন দেশ। এটি বাংলাদেশ ২.০।
ইউনূস নির্বাচন, বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য গঠন করা ছয়টি কমিশনের কথা তুলে ধরেন। এসব উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে জর্জিয়েভা বলেন, আইএমএফ বাংলাদেশ সরকারের জন্য আর্থিক সহায়তা দ্রুততর করবে। আইএমএফ বোর্ড টিমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ঋণদান কর্মসূচি শুরু করতে পারে, অথবা এটি গত বছরের শুরুর দিকে চালু হওয়া বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচির অধীনে আরও ঋণ দিতে পারে।
জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আইএমএফ প্রধানকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র এক সপ্তাহ সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরাধের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
দেবপ্রিয় দেশের অর্থ প্রদানের ভারসাম্য বাড়াতে আইএমএফয়ের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিনিময় হার স্থিতিশীল করতে আইএমএফের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।