শহরের শতবর্ষী প্রাচীন সংগঠন ইসলামাবাদ টাউন কো– অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ভোটার তালিকাসহ নানা বিষয়ে ব্যাপক গোঁজামিল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় অভিযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সোসাইটির সম্পত্তি এবং তহবিল নিয়েও ব্যাপক নয় ছয়–এর অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইসলামাবাদ টাউন কো–অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম চলছে গত একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ১৯০৬ সালে তৎকালীন অবহেলিত সমাজ ব্যবস্থায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কিছুটা সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে গঠিত হয় এই সংগঠন। সংগঠনের শর্ত ছিল যে, চট্টগ্রাম শহরে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের যে কেউ সোসাইটির সদস্য হতে পারবেন। তবে সদস্যভুক্তির জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম–কানুন রয়েছে। যেমন একজন মানুষ সদস্য হতে চাইলে তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির নিকট আবেদন করবেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্যপদ দেয়ার ব্যাপারে এজেন্ডা নির্ধারণ করে সভা করবেন। সভায় সদস্যপদ প্রদানের ব্যাপারটি নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে, নিজেদের ভোটব্যাংক গড়ে তুলতে বিগত ১৫ বছর ধরে অসংখ্য ভুয়া ভোটার করা হয়েছে। সোসাইটির বিগত ব্যবস্থাপনা কমিটি ৯৬৩ জন ভোটারের তালিকা প্রকাশ করে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে। কিন্তু বিক্ষুদ্ধ কতিপয় সদস্য এই ভোটার তালিকায় প্রচুর ভুয়া ভোটার রয়েছে অভিযোগ করে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত নির্বাচন স্থগিত করে দেন। এরমধ্যে বিগত ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সমবায় অধিদপ্তর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন একটি কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসারকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটি ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সদস্যদের এক কপি ছবি ও এনআইডি জমা দিয়ে সদস্যপদ হালনাগাদ করতে নোটিশ জারি করে। ওই নোটিশের প্রেক্ষিতে ৬৬৫ জন সদস্য তাদের সদস্যপদ হালনাগাদ করেন। অভিযোগে বলা হয়, সোসাইটির এই ৬৬৫ জনই প্রকৃত সদস্য। বাকিরা ভোট ব্যাংকের ভুয়া ভোটার। এসব প্রক্রিয়ার মাঝে অন্তর্বর্তী কমিটির মেয়াদও ১২০দিন পর শেষ হয়ে গেলে মমতাজ বেগমকে প্রধান করে পুনরায় একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন এবং খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। এতে পূর্বের চেয়ে বেড়েছে ভোটার। সর্বমোট ৯৬৮ জনের একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই খসড়া ভোটার তালিকায় অসংখ্য ভুয়া ভোটারের তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করে সমবায় আইনে অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে আরো ৩৬ জন বাড়িয়ে সর্বমোট ১০০৪ জনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই ভোটার তালিকায় অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মমতাজ বেগম স্বামীসহ এবং উপ সহকারী নিবন্ধক গাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী এবং তার স্ত্রীর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। অভিযোগে আরো বলা হয়, ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটারের ছড়াছড়ি। এতে সাবেক সভাপতি এ এ এম সাইফুদ্দীনের ( সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের বড় ভাই) বাসভবন আন্দরকিল্লাস্থ মোহাদ্দেস ভিলায় ৪১ জনকে ভোটার হিসেবে দেখানো হয়েছে। যাদের কোনো অস্তিত্ব ওই আবাসিক ভবনে নেই। সাবেক সভাপতির মেয়ের জামাইয়ের বাসবভনের ঠিকানায় দেখানো হয়েছে ১০ জন ভোটার। ওই ভবনেও তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। এভাবে বিভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে কয়েকশ’ ভুয়া ভোটার করা হয়েছে। যাদেরকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইতোমধ্যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সোসাইটির একাধিক সদস্য এ ভুয়া ভোটারদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে আবারো আবেদন করেছেন।
কিন্তু এসব আবেদন নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আগামী ১৯ এপ্রিল ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করে নির্বাচনী সিডিউল প্রকাশ করা হয়েছে।
অভিযোগে গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে সোসাইটির নানা অনিয়ম তুলে ধরে সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেখানে বলা হয়, সোসাইটির বড় অংকের টাকা বিগত কমিটির সহ–সভাপতির ছেলের কর্মস্থল হাটহাজারীতে নিয়ে ব্যাংকে এফডিআর করা হয়। এস আলমের মালিকানাধীন ওই ব্যাংক থেকে টাকাগুলো ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সোসাইটির যাবতীয় কার্যক্রম শহরের অভ্যন্তরে হলেও হাটহাজারীতে টাকা জমা রাখা শুধুমাত্র ছেলেকে চাকরিতে সুবিধা পাইয়ে দিতে এই কাজ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একইভাবে সাবেক সভাপতির মেয়ের কর্মস্থল এস আলমের অপর একটি ব্যাংকেও বড় অংকের টাকা রাখা হয়। এই টাকা পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আন্দরকিল্লাহ এলাকায় সোসাইটির নিজস্ব ২৪ গন্ডা জায়গা রয়েছে। স্বর্ণ বন্ধক রেখে সোসাইটি থেকে টাকা ধার নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এভাবে অনেকের স্বর্ণ সোসাইটির নিকট বন্ধক রয়েছে। এসব স্বর্ণের হিসেবেও নয় ছয় রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিগত সময়ে সোসাইটি পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা সব অনিয়মের তদন্ত এবং সুষ্ঠু একটি ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সোসাইটির টোকেন দিয়ে ভোট প্রদান করা যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ভোটে কারচুপির বড় সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করে সদস্যরা বলছেন, এনআইডি প্রদর্শন করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান সম্ভব। তারা বলেন, বিগত ১৫ বছরে বহু অনিয়ম হয়েছে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটানুষ্ঠান সময়ের দাবি বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে গতকাল গাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী এবং অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মমতাজ বেগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।