ভোটাধিকার প্রয়োগ ও বাক্‌-স্বাধীনতাপ্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকার

মহান বিজয় দিবস আজ

| মঙ্গলবার , ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

মহান বিজয় দিবস আজ। বাঁধভাঙা আনন্দের দিন। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের দিনটি আজ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের দিন। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের জাল ভেদ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। প্রায় ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল এই মাহেন্দ্রক্ষণ। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এইদিনই বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে এনেছিল লালসবুজের পতাকা। পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয় স্বাধীনসার্বভৌম বাংলাদেশ। বিজয়ের এই দিনে সকল শহীদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এ ভূভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতা। বাঙালির সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস মহান স্বাধীনতা। অত্যাচারনিপীড়নে জর্জরিত বাঙালি জাতির সামনে আলোকময় ভবিষ্যতের দুয়ার খোলার অকৃত্রিম প্রয়াস। তাই গৌরব ও অহঙ্কারের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। প্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিকে প্রগতি, কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার লক্ষ্যে নতুন শপথে বলীয়ান হতে হবে।

গত বছরের মতো এবারের বিজয় দিবসও অন্য সময়ের বিজয় দিবস থেকে আলাদা। ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা যখন দীর্ঘ পনেরো বছরের সরকারকে হটিয়ে দিল, তখন সৃষ্টি হলো নতুন আবেগ। জুলাই ৩৬এর আবেগটা ছিল বিন্দু থেকে সিন্ধুতে রূপান্তরিত হওয়া একটি মহা আবেগ, যার সামনে মহাশক্তিধর একটি স্বৈরশাসনপ্রবণ সরকার খড়কুটোর মতো ভেসে গেল। তবে এই মহাশক্তিধর সরকার পতনের প্রথম কারণটি ছিল বাকস্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে ভোটাধিকার হরণ। তাই এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য মরিয়া। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে, তা নয়; তারা প্রমাণ করছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।

আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। দেশে এখন প্রযুক্তিগত শিক্ষা যুগে প্রবেশের প্রক্রিয়া চলছে। তথ্য প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে শিক্ষার কৌশল বদল হয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিতে, সমতা আনয়নে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিখনপঠন পদ্ধতির পরিবর্তন ধারায় রয়েছে। এই নতুন পরিস্থিতির সাথে আমাদের খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা গড়ে তোলা আবশ্যক। যাতে অর্জিত শিক্ষা ব্যবহার করে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়।

৫৪ বছর ধরে দেশে মানুষের উন্নত জীবনযাপনের চেষ্টা চলছে। তারপরও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের অগ্রগতি হচ্ছে না। অনেক উন্নত দেশ দু’শ বছর ধরে তাদের জীবনমানের পরিবর্তনের চেষ্টারত। এসব শিল্পউন্নত দেশের কাজ সময়ের প্রয়োজনে অব্যাহত রাখতে হয়। আমাদেরও জীবনজীবিকার সংগ্রাম নিরলসভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এ কাজে নিয়মশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য। আইনশৃঙ্খলার অভাব এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। আইনের চর্চা ন্যায় বিচারকে নিশ্চিত করে সরকারি কর্মকর্তাকর্মচারীদের দায়িত্ব পালন নিরপেক্ষনির্বিঘ্ন করে। কোন ক্রমে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনীতি জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত হয়। রাজনীতি চলে নদীর প্রবাহের মত আঁকাবাঁকা পথে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করলে মানুষ অধিকার হারায়।

রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রাম ঠেকাতে তথা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষা করতে সরকারকে যদি ব্যস্ত থাকতে হয় তা হলে মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। আমাদের সম্পদ অপ্রতুল। দেশে বৈরী পরিবেশ থাকলে বিদেশিরা যারা আমাদের অর্থ সাহায্য করে তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই শান্তিশৃঙ্খলাঐক্য ও কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে দলমত নির্বিশেষে সবার একমত থাকা আবশ্যক। তা না হলে অবহেলিত গ্রামের মানুষের ন্যায্য হিস্যা শহরবাসীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি তথা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। আমাদের লক্ষ্য হতে হবে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিজয় দিবস : বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন