রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন তাদের ভোটারদেরকে নিয়মিত হুমকি প্রদান করছে আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীরা। প্রচারণায় অংশ নিতে দিচ্ছে না, ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয় দেখানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র ইউপি (জেএসএস ও ইউপিডিএফ সমর্থিত) প্রার্থীরা দাবি করেন, যেকোনো মূল্যে যাতে প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। কোনোভাবেই যাতে কারচুপি না হয়।
আজ বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাঙামাটি সদর উপজেলার ইউপি পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এসব অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর হলরুমে সদর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাচন অফিস এ সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
মগবান ইউপির আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনিময় চাকমা বলেন, “আমার এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।”
একই দলের সাপছড়ি ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকায় সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মহড়া শুরু হয়ে গেছে। তারা ভোটারদের হুমকি প্রদর্শন করছে, মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।”
বালুখালী ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী (আওয়ামী লীগ) অমর কুমার চাকমা বলেন, “আমার এজেন্টদের মোবাইল ফোনে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখানো হচ্ছে।”
এদিকে, সাপছড়ি ইউপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবীর চাকমা, কুতকুছড়ি ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী পদ্ম কুমার চাকমা, মগবান ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোময় চাকমা বক্তব্যে বলেন, ভোট কারচুপির আশংকা করছি। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, যেকোনো মূল্যে যাতে প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হয়।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন উপহার দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচনে কাউকে গোলযোগ বা অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া হবে না। যদি কেউ মনের মধ্যে ন্যূনতম সুপ্ত বাসনা পুষে রাখেন তাহলে সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। মনে রাখবেন সব প্রার্থীই আমাদের কাছে সমান, সবাইকে এক চোখে দেখি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নির্দেশনা সেটি আমরা পালন করতে বদ্ধপরিকর। সেই অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।”
পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, “অতীতের মতোই এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সেবার জন্য নিয়োজিত হবেন, অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করা তাদের মানায় না। নির্বাচনে কেউ যদি এমন অনাকাঙিখত পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করে তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। নির্বাচন উৎসবের, উৎসব দিয়েই শেষ হোক। ভুল করতে গিয়ে সারাজীবনের খেসারত দিতে যাবেন না।”
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান মহসীন রোমান, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, সেনাবাহিনীর সদর জোন প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মেজবাহ উদ্দিন রাতুল, নানিয়ারচর জোন প্রতিনিধি ক্যাপেটন পারভেজ রহমান, বিজিবি প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মুকিত বিন মোহাম্মদ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদ তালুকদারসহ বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত প্রার্থীরা। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর। ছয় ইউপিতে আওয়ামী লীগের হয়ে ৬ জন ও স্বতন্ত্র হয়ে ১৮ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। ছয় ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৮৮০ জন।