আজ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ভবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবার সন্ধ্যায় কমিশন সচিবালয় থেকে এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষ্যে সারা দেশে সরকারি–বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচনে যার যার ভোট সে সে শান্তিমতো দেবে। এতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে এবং সেই পরিবেশটা রক্ষা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছে তারা। এ কথা অনস্বীকার্য যে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন গতিশীল হতে পারে না; দীর্ঘস্থায়ীও হয় না। জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনেরও পূর্বশর্ত হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অনেকে উৎকণ্ঠিত। সংঘাতের আশংকা করছেন কেউ কেউ। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, নির্বাচনে জয়–পরাজয় আছে। সবাই জয়ী হওয়ার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে। কিন্তু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই নির্ধারিত হয় জয়–পরাজয়। কাজেই জয়ের জন্য নির্বাচনের মাঠে অবতীর্ণ হলেও পরাজয় মেনে নেওয়ার মানসিকতা অবশ্যই সব দলের মধ্যে থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও নিরপেক্ষ ও কঠোর হতে হবে–এমন প্রত্যাশা আমরা করতে পারি। সবার সহযোগিতা ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না।
৭ জানুয়ারিতে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে অনেকে সন্দিহান। তবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না গেলে বাংলাদেশের জন্য তা ভালো হবে না–এমনই আভাস দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভোট অবাধ, সুষ্ঠু না হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ আরও বলা হয়েছে, ‘ আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাইব না। কারণ আমরা সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’ রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, ইসির এমন মন্তব্য জনগণকে সংশয়ে ফেলে। অন্য ধরনের ইঙ্গিত দেয়। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যভাবে উদ্বুদ্ধ করা যেতো।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে অঙ্গীকার করা হয়েছে পরেরবার ক্ষমতায় গেলে বা সরকার গঠন করলে কী কী করা হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পেশাজীবীসহ সমাজের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এই ইশতেহার বা অঙ্গীকারনামা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তর থেকে ঘুষ–দুর্নীতি উচ্ছেদ, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং দুর্নীতিবাজদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাসহ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যে ১১টি অগ্রাধিকার ঠিক করেছে, এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও কর্মসংস্থান, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সামপ্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি কতোটা বাস্তবায়িত হতে পারে – সেটাই দেখার বিষয়।