বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ ভোজ্য তেল প্রয়োজন, উৎপাদনে ঘাটতি থাকে তার ৭০ শতাংশ, যা মেটাতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। একইভাবে ডালের চাহিদার ৬০ শতাংশ এবং মসলায় ৩০-৩২ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট- বিএআরআই এর এক যৌথ প্রতিবেদনে। তবে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব খাদ্যপণ্যের আমদানি নির্ভরতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খবর বিডিনিউজের। রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প-তৃতীয় পর্যায় (১ম সংশোধিত)’ নিয়ে এক কর্মশালায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রকল্পের পরিচালক খায়রুল আলম। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা যেখানে ১০ দশমিক ৫১ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এখন ১৮ গ্রাম তেলের চাহিদা রয়েছে। আর ডালের চাহিদ ৪৫ গ্রাম। সে হিসাবে বছরে ২৬ দশমিক ২৮ লাখ মেট্রিক টন ডালের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশের উৎপাদন হচ্ছে ৯ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। বছরে ৪০ দশমিক ৪ লাখ মেট্রিক টন মসলার চাহিদা থাকলেও দেশে উৎপাদিত হয় ৩৯ দশমিক ৫৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ফসল সংরক্ষণের উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন মসলা নষ্ট হয়। ফলে শতকরা হিসেবে ৩০ শতাংশের মত ঘাটতি থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প’ হাতে নেয় ২০১৭ সালে। তবে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সারা বছর ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসলের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। সেই সঙ্গে উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এসব ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং তাতে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। প্রকল্পে মৌচাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধু উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ উৎসাহিত হবে বলে সরকার মনে করছে। প্রকল্প পরিচালক খায়রুল আলম বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে ১২ দশমিক ০৭ লাখ মেট্রিক টন, ডাল ১১ দশমিক ২২২ লাখ মেট্রিক টন, মসলা ৪০ দশমিক ৭৭৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে সম্ভব হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।