ভোজ্যতেলের বাজারে ফের অশনি সংকেত

ইন্দোনেশিয়ার পাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

পামতেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া পাম তেলের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার প্রভাবে ভোজ্যতেলের বাজারে উত্তাপ আরো বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণে বেড়েছে ১ হাজার টাকা এবং সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে। এর মধ্যে কেবল ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে ৭০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া থেকে আসে বাকি ৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পাম তেল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আমাদের দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে নতুন করে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে বলা যায়। গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। বর্তমানে ১ হাজার টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০০ টাকায়। অন্যদিকে একই সময়ে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ টাকায়। বর্তমানে ৬০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে দেশে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠে ভোজ্যতেলের বাজার। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মার্চে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েল আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে মোট ভ্যাট ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। ফলে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন খবরে আবার চড়া হতে থাকে বাজার। সর্বশেষ গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়া সরকার পাম তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিও কমে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি কম হওয়ায় দাম আরো অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপরদিকে কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, দেশে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ ২২ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৬১ হাজার টন পাম অয়েল ও ৩ লাখ ৬১ হাজার টন সয়াবিন। দেশে ভোজ্যতেলের মাসিক চাহিদা দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টন। মাসভিত্তিক গড় ব্যবহার বিবেচনায় নিয়ে মার্চ পর্যন্ত পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টন ভোজ্যতেল ব্যবহার হওয়ার কথা। এ মুহূর্তে কোনো পাম অয়েল আমদানি না হলেও এখনকার মজুদ দিয়েই অন্তত এক মাসের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোজ্যতেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার বাড়লে দেশের অভ্যন্তরে বাজারও বাড়তে থাকে। অনেকে ভোজ্যতেলের বাজারে সিন্ডিকেট কারসাজির কথা বলে থাকে, এটি ঠিক নয়। ভোগ্যপণ্যের বাজার মূলত চাহিদা ও সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ করে এখন ইন্দোনেশিয়া পাম তেলের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার কারণে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইন্দোনেশিয়া পাম তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ। আসলে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে পাম ও সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। কারণ যেসব দেশ থেকে পাম ও সয়াবিন আমদানি হয়, সেইসব দেশে নাকি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমাদের দেশে সয়াবিন আসে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। এছাড়া পাম তেল আসে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবলী খেলার আসর নির্বিঘ্ন রাখতে সিএমপির নানা উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধভোটে যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ নেবে না