ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রয়োজন সরকারের নিবিড় নজরদারি

| শনিবার , ২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে ভোগ্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ক্রেতা সাধারণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব ভোগ্যপণ্যে’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন দরে ভোগ্যপণ্যের বাজার চড়া। ব্যবসায়ীদের দাবি-আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বাড়ার কারণে তেল-চিনি ও ডালের মতো প্রায় সব ধরনের বাজার বাড়তি। তবে বুকিং বাড়ার সাথে সাথে দেশের বাজারে বেড়েছে ডলারের দামও। গত দেড় মাস আগে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলার নেগোশিয়েট হতো ৮৪ টাকা ৮৫ পয়সা। বর্তমানে সেটি ৫৫ পয়সা বেড়ে গিয়ে নেগোশিয়েট হচ্ছে ৮৫ টাকা ৪০ পয়সা ধরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগ্যপণ্যের আমদানির ব্যয় বাড়ার সাথে সাথে পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে।
গত সোমবার খাতুনগঞ্জের কয়েকজন ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বেড়েছে। এর মধ্যে তেলের অস্থিরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। তেলের সাথে সামপ্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে সব ধরনের ডাল ও গম-চিনির বাজার। তবে ঠাণ্ডা রয়েছে গরম মসলার বাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সে পণ্যটি দেশে আমদানি না হলেও দাম বেড়ে যায়। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ার জন্য সরবরাহ, চাহিদা, ফলন বা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো যে উপাদানগুলো প্রভাব ফেলে বাংলাদেশে, তার চেয়েও অনেক বেশি উপাদান প্রভাব ফেলে। এর উদাহরণও আছে ভুরি ভুরি। এবারের দাম বাড়ার নেপথ্যে আছে ‘ডলারের দাম বৃদ্ধির’ প্রভাব। তাঁরা বলেন, ব্যবসায়ীদের অতিলোভ, ভোক্তাদের একসঙ্গে বাজার করার প্রবণতা এবং মূল্য বৃদ্ধির এ প্রতিযোগিতা বাজারে এক ধরনের অস্বস্তিকর চাপ পড়েছে। এতে ভোগ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে, কোন পণ্যের কেমন মজুত, আমদানি ও সরবরাহ কেমন, তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রচার করা। তা না হলে এই প্রবণতা আরও কিছুদিন থাকবে এবং মানুষের মনে অস্বস্তি তৈরি করবে। তবে এ সময় নিত্যপণ্যের বড় রকমের কোনো ঘাটতি যাতে না হয়, সে জন্য দেশীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো এবং আমদানি পণ্য আসছে কি না, তা তদারকি দরকার।
বাজারে মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থার বাজার মনিটরিং টিম কাজ করলেও তাতে সুফল আসে না। কারণ মনিটরিং টিমগুলো বাজারের পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ না করে বাজারে যায়। আবার বাজারে প্রবেশের আগে বাজার সমিতি ও চেম্বারগুলোকে অবহিত করে যায়। বাজার সমিতি ব্যবসায়ীদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেন। ফলে মনিটরিং টিম বাজারে তেমন কোনো ত্রুটি পায় না। আবার স্বল্প সময়ে বাজারে অবস্থান করলে, অনিয়ম বের করা কঠিন। সেকারণে এসব টিম বাজার মনিটরিং করে ফিরে যাওয়ার পরই বাজার আগের অবস্থানে চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে সরকারের নিবিড় নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ফলে বাজার দর সংক্রান্ত সরকারের সিদ্ধান্ত কখনোই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও আন্তরিকতার অভাব, জনবল স্বল্পতা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের হীন প্রচেষ্টা অনেকাংশে দায়ী বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর নেতৃবৃন্দের মতে, ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রশাসন যখন বিভিন্ন সময়ে দু-একটি অভিযান পরিচালনা করে, তখন সরকারকে অবহিত করা হয় যে- ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর ও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সমন্বিত বাজার তদারকি কার্যক্রমের বিকল্প নেই। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের মতো অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি প্রশাসনের দৃষ্টি থাকা জরুরি। দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার নজরদারি জোরদার করতে হবে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে মুনাফাভোগীদের ওপর। জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধগিনির জাতীয় দিবস