ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য : জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা রুখে দিতে হবে

| সোমবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বাজার মূল্য নিয়ে নানা সময়ে আমাদের লিখতে হচ্ছে। কেননা বেশ কয়েকদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল। কোনো পণ্যই ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নেই। লোকজনের বক্তব্য হলো, মজুরি-বেতনে মাসের ২০ দিনও চলে না। সব মিলিয়ে যখন সংসার চালানোই দায়, তখন দেশের বিপণনকারী কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেল ও নানা ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে তৎপর। গত ২৯ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী চাপ মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি নির্ভর পণ্য ছাড়াও দেশে কৃষকের ঘরে ধান উঠার সুফলও পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ধানের ভরা মৌসুমেও চালের বাজার চড়া থাকছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেলের বাজার। এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। এছাড়া ডাল-চিনি ও গমের বাজারও চাঙ্গা। এর মধ্যে সরকার ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রভাবে পণ্য পরিবহনে খরচের প্রভাব পড়েছে। সবমিলিয়ে ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্তশ্রেণী বরাবরের মতোই নিষ্পেষিত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালে অনেক সাধারণ বেসরকারি চাকরিজীবীর বেতন বাড়েনি। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের মধ্যে অনেক পণ্য রয়েছে যেগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর সব সময় এক রকম থাকে না। কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সেইসব দেখার দায়িত্ব সরকারের। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো দাম বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারী নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
চাল-ডালের পাশাপাশি আটা, চিনি, তরকারি, মাছ, মাংসের দামও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে। এসবের মূল্য ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিম্নস্তরে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। শুধু দরিদ্র নয়, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। অসাধু এবং অতি লোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জিনিসপত্র মজুদ রেখে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে তুলছে। যার ফলে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্র্রব্যাদির কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে, ধরে রাখা যাচ্ছে না ঊর্ধ্বমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারের এ দুর্বিষহ অবস্থা দু-একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা থেকে দেশের সব পর্যায়ের ভোক্তা-ক্রেতা শ্রেণির যেন পরিত্রাণ নেই। বাজার মনিটরিং টিম থেকে দাম নিয়ন্ত্রণের সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। মনে রাখতে হবে, ব্যবসায়ী যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে। বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রেতা এবং নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনাসহ নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশের কালোবাজারি, চোরাচালানি যারা দৈত্যের মতো জনগণের ওপর চেপে বসে আছে, তাদের কর্মকাণ্ড রোধ করতে হবে সবার আগে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর মতে, ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বড় খড়গ পড়েছে মধ্যবিত্তশ্রেণীর ওপর। কারণ মধ্যবিত্তশ্রেণীর বেশিরভাগ লোককে সীমিত আয় দিয়ে চলতে হয়। এরমধ্যে করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে গেছেন। তাই বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত লোক আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করে চলতে পারছে না।
বাজার বিশ্লেষকরা এবারের দাম বাড়ার পেছনে কোভিডকালে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, জ্বালানি তেলের দাম ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন দেশের মজুতপ্রবণতাকে দায়ী করছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব সৃষ্টির সুযোগ নেই আমাদের। এসব কারণের বাইরে আমাদের তৈরি কিছু কারণ বাজার অস্থিতিশীল করে। আমাদের সেগুলো দূরীকরণে মনোযোগ বাড়াতে হবে। দাম বাড়ার আগে বাড়িয়ে দেয়া, বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুদ বাড়ানো, সংঘবদ্ধ হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা প্রভৃতি জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা রুখে দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে