ভোগান্তি শেষ হতে সময় লাগবে আরো ১ মাস

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২১ মে, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নগরের মুরাদপুর মোড়ে পুরনো বক্স কালভার্ট ভেঙে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত ১৭ জানুয়ারি। ওইদিন থেকে মুরাদপুরঅক্সিজেন সড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। দুই সপ্তাহ আগে নতুন কালভার্টটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। অথচ এখনো যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কালভার্ট নির্মাণের সুবিধার্থে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। এখন ওইসব পাইপলাইন বিশেষ করে ওয়াসার পাইপলাইন পুনঃসংযোগ করা হচ্ছে। পাইপলাইন পুনঃসংযোগ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কালভার্টটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে না।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, সেখানে সংস্থাটির তিনটি পাইপলাইন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটির ব্যাস হচ্ছে ৯০০ মিলিমিটার, ৪৫০ মিলিমিটার ও ৩০০ মিলিমিটার। কালভার্ট নির্মাণের সুবিধার্থে পাইপগুলো দুই পাশ থেকে কেটে ফেলা হয়। এখন নতুন পাইপ দিয়ে সেগুলো পুনঃসংযোগ করা হবে। তা করতে কমপক্ষে আরো এক মাস লাগতে পারে।

সাধারণ লোকজন বলছেন, প্রায় ৪ মাস ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ যান চলাচল উন্মুক্ত করা হবে তাও অনিশ্চিত। বিদ্যমান ভোগান্তি আরো দীর্ঘ হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত তারা। নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় এ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। নবনির্মিত কালভার্টের দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার, প্রস্থ ৮ মিটার।

জানা গেছে, কালভার্টের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক করা হয়নি। মূলত এ কারণেই যান চলাচল করতে পারছে না। তবে কালভার্ট পথচারীর জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে হেঁটে লোকজন এপারওপার চলাচল করতে পারছেন। এর আগে পাশে বিকল্প হিসেবে একটি সরু লোহার পুল করা হয়েছিল। ঝুঁকি নিয়ে সেটা দিয়ে লোকজন চলাচল করতেন। এখন মূল কালভার্ট দিয়ে চলাচল করতে পারায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন তারা। কিন্তু যান চলাচল বন্ধ থাকায় মুরাদপুরঅক্সিজেন সড়কের ওপর নির্ভরশীল লোকজনের ভোগান্তি কমছে না। জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ছাড়াও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির যানবাহনগুলো মুরাদপুরঅক্সিজেন সড়ক হয়ে চলাচল করে। এই অংশটি শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডের লোকজনেরও চলাচলের অন্যতম প্রধান সড়ক। ফলে মুরাদপুর মোড়ে যান চলাচল বন্ধ রাখায় প্রতিদিন কয়েক লক্ষ লোককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন প্রাইভেট কার, ছোট ছোট ট্রাকপিকআপ, সিএনজি টেক্সি, রিকশাসহ অনেকগুলো যান মুরাদপুর মোড়ের বিকল্প হিসেবে অভ্যন্তরীণ মোহাম্মদপুর সড়ক ব্যবহার করে। মুরাদপুরের একটু আগে রেল বিট হয়ে মোহাম্মদপুর সড়কে প্রবেশ করে মাজার রোড হয়ে আরাকান সড়কে উঠে এসব যান। একইভাবে আরাকান সড়ক থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে যানবাহন রেল বিট হয়ে অক্সিজেনমুরাদপুর সড়কে ওঠে। এতে তুলনামূলক অপ্রশস্ত এ সড়কে প্রতিদিন তীব্র যানজট লেগে থাকে। অতিরিক্ত যানের ভারে মোহাম্মদপুর সড়কটির বেশিরভাগ অংশ সম্প্রতি ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। মুরাদপুরের কালভার্টের প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ মোহাম্মদপুর সড়কে।

এছাড়া মুরাদপুর মোড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অক্সিজেনমুরাদপুর সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজন। নাছির উদ্দিন নামে অক্সিজেন এলাকার এক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, আগে মার্কেট যেতে ১০ টাকা ভাড়া লাগত। এখন দ্বিগুণ খরচ হয়। কোনো সময় বেশিও হয়। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অক্সিজেন থেকে মুরাদপুরে কালভার্টের উত্তর পাশে আসতে খরচ হয় ১০ টাকা। এরপর হেঁটে মুরাদপুর মোড় থেকে অন্য গাড়িতে মার্কেট যেতে সমান অর্থ খরচ হয়।

রাউজান কলেজের এক শিক্ষিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুরাদপুর থেকে রাউজান পর্যন্ত সরাসরি বাস চলাচল করে। বাসগুলো ছাড়ে মুরাদপুর মোড় থেকে। আগে বাসে কালভার্ট পার হয়ে অক্সিজেন হয়ে সরাসরি কলেজের সামনে নামতাম। এখন বাসগুলো যায় দুই নম্বর গেইট হয়ে। এতে সময় বেশি লাগে। তাছাড়া দুই নম্বর গেইটে প্রায় সময় তীব্র্র যানজটে পড়তে হয়। এ সমস্যা আগে ছিল না।

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, কালভার্টের নির্মাণ কাজ শেষ। আমরা শাটারিংও খুলে ফেলেছি। এখন সেখানে ওয়াসার যে পাইপ রয়েছে তার কাজ করা হচ্ছে। ওটা শেষ হলে আমরা দুই পাশে সংযোগ সড়ক করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। পাইপলাইনের কাজ দ্রুত শেষ করা নিয়ে ওয়াসার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম আজাদীকে বলেন, কাজ শেষ করতে আরো মাসখানেক লাগতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের তিনটা পাইপ আছে। কালভার্ট করার জন্য পাইপের দুই পাশে কেটে দিই। এখন নিচ থেকে পাইপ এনে জোড়া লাগিয়ে দেব। সেখানে বড় পাইপ থাকায় একটু সময় লাগছে। সেটা একটু চ্যালেঞ্জিং।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিনতাইয়ের কবলে বিএসআরএমের দুটি ট্রাক
পরবর্তী নিবন্ধহঠাৎ লাইনের ওপর বিগড়ে গেল ট্রাক ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ