বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর পর আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী বাজারের গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। আশপাশে জমির দাম এখন ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকা, যা চট্টগ্রাম শহরের চেয়েও বেশি। অথচ প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতই বেহাল এই বাজার। রাস্তার উপর টেক্সি স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, যানজট, বাজারের অব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি জমে থৈ থৈ জলাবদ্ধতা সবমিলিয়ে ভোগান্তির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, চাতরী চৌমুহনী বাজারের চিত্র একটি প্রভাবশালী মহলের কারণে তৈরি হয়েছে। প্রশাসন কঠোর হলেই সমাধান কঠিন কিছু নয়। শুধু একটি উপজেলা নয় পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ, বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ এই সড়কে চলাচল করে। দৈনন্দিন কেনাকাটা, ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রয়োজনে যারাই চাতরী আসছেন সবাইকে পড়তে হচ্ছে নিদারুণ ভোগান্তিতে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি কিংবা বাজার কমিটি কারো কাছেই যেন এর সমাধান নেই।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় বাজার ও মূল সড়কের যাচ্ছেতাই অবস্থা। বাজারের ভেতরে ও মূল শেড কাদাপানিতে পুরো একাকার। অভিযোগ রয়েছে এসব শেডের বরাদ্দ নিয়েও। মূল ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ে বরাদ্দ দেয়া হয় শেড। সেগুলো আবার হাতবদল হয়ে বিক্রি হয় কয়েকগুণ দামে। বাজার সংলগ্ন সড়কের প্রায় পুরোটাই হকার ও টেঙি স্ট্যান্ডের দখলে চলে গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে দুই শতাধিক হকার। হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি যেমন আছে তেমনি সিএনজি টেঙির টোকেন বাণিজ্যও বেপরোয়া। বাজারের ভেতরে একটি গণ শৌচাগার থাকলেও উপজেলা প্রশাসন কোনো আয় পাচ্ছে না। মাসে ৩ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেই টাকা স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। একইভাবে টোকেন বাণিজ্যেও ভাগ বসাচ্ছে তারা।
চলতি বছরে চাতরী চৌমুহনী বাজারের ইজারামূল্য ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা। দামী বাজার হলেও সেই অনুপাতে কোনো ধরনের দেখভাল নেই। পিএবি সড়কের চাতরী চৌমুহনী বাজারের পানি নিষ্কাশনে ২০১৮–২০১৯ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসন ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ছয় লেন সড়কের কাজ করার সময় নালার কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। পরে নালা নির্মাণের জন্য আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সওজ ও উপজেলা প্রশাসন। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কাদা আর আবর্জনায় ভরে গেছে পুরো এলাকা। উপজেলা প্রকৌশলী তসলিমা জাহান বলেন, বাজারের ড্রেন দিয়ে পানি নামছে না। পশ্চিম পাশের রোড দিয়ে বড় ড্রেন করে খালে পানি ফেলতে হবে। এছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
বঙ্গবন্ধু টানেল পার হয়ে আসা বেশিরভাগ গাড়ি চলাচল করে চাতরী চৌমুহনী হয়ে। বর্তমানে শাহ আমানত সেতু থেকে ১০ মিনিটে চৌমুহনী আসা গেলেও এখানে এসে যানজটে আটকে যায় গাড়ির চাকা। আনোয়ারার আর কোথাও যানজট না থাকলেও এখানে যানজটের মূল কারণ অবৈধ টেঙি স্ট্যান্ড ও টোকেন বাণিজ্য। এখানকার পুলিশ বক্সে একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ৭জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও যানজট সমস্যা থেকে রেহাই মিলছে না।
অভিযোগ রয়েছে সিএনজি টেক্সিসহ ও অন্যান্য গাড়ি থেকে ট্রাফিক পুলিশের নামে গোপন ‘কোড নম্বর’ দিয়ে আদায় করা হয় প্রতিমাসে অর্ধ কোটি টাকা। কথিত লাইনম্যানদের মাধ্যমে টোকেনে চাঁদা তোলা হয়। মূলত এই চাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত অটোরিকশা আনতে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে একটি কোড নম্বর নিতে হয় চালকদের। বেশিরভাগ গাড়ির ডকুমেন্ট ঠিক থাকে না বলেও চালকরাও নীরবে চাঁদাবাজি মেনে নিচ্ছেন। চাতরী চৌমুহনীর দায়িত্বরত ট্রাফিক এএসআই নিজাম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চাতরী চৌমুহনীতে টোকেন বাণিজ্য নাই। তথ্য নিলে দেখবেন সব মইজ্যারটেকের।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, চাতরী বাজার পরিস্থিতি ও ভোগান্তি থেকে উত্তরণে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে শিগগিরই বৈঠক আহ্বান করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, চাতরী চৌমুহনী বাজার উপজেলার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা কেন্দ্র। এখানকার সব সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, চাঁদাবাজি মেনে নেওয়া হবে না।