বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস আগামীকাল। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৬২ সালের ১৫ই মার্চ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি কংগ্রেসে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে একটা বক্তৃতা দেন। নিরাপত্তার অধিকার, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার- ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন যা পরবর্তীকালে ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়।
রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকই ভোক্তা। একজন ভোক্তা হিসেবে রয়েছে তার ‘ভোক্তা অধিকার’। কিন্তু ভোক্তার অধিকার কী, তা জানেন না ভোক্তাই। প্রতারিত হলে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে তাও ভোক্তাদের অজানা। ভোক্তা অধিকার নিয়ে যেসব সংগঠন কাজ করছেন, সেসব সংগঠনের কার্যক্রম দেখা যায় শুধু ভোক্তা অধিকার দিবসেই। দিনব্যাপী আলোচনা, র্যালি, মানববন্ধনের মধ্যেই যেনো সীমাবদ্ধ থাকে দিবসের কর্মসূচি। নীরবে যেন চাপা পড়ে থাকে ভোক্তার প্রকৃত অধিকার।
আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে কিছু কিছু বিড়ম্বনার শিকার হই। প্রায়শই আমরা বেশি টাকা দিয়ে পণ্য কিনি। আবার কখনো কখনো মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য কিনেও বিড়ম্বিত হই, পণ্য ফেরত দিতে চাইলে করতে হয় অনেক বাক-বিতর্ক। এ রকম পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার আমরা নানা সময়ে হয়ে থাকি। কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলে নীরবে সয়ে যাই, বেশীরভাগটা ইচ্ছার বিরুদ্ধে। নিরাপদ এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারাটা ভোক্তার অধিকার এবং তা আইন দ্বারা সংরক্ষিত। কেননা একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকই ভোক্তা।
বিক্রেতারা যাতে কোনোভাবেই ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে বা ঠকাতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় একটি কার্যকর আইন প্রণয়নের দাবি ছিল অনেক দিন থেকেই। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে সংসদ কর্তৃক গৃহীত ‘ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ ২০০৯’ আইনটি ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তবে এটুকু সত্য যে, আইনটি প্রণয়নের ফলে জনগণ এর সুফল কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প-বিস্তর হলেও পেয়েছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানও আগের থেকে অনেক সতর্ক হয়েছে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ যতটা হওয়ার কথা, ঠিক ততোটা চোখে পড়ে না। এর মূলে রয়েছে আইনটি সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা।
অশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত শ্রেণিও ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ সম্পর্কে তেমনভাবে জানে না। যার ফলে আইনটির যথার্থ প্রয়োগ হচ্ছে না। সরকারের পক্ষেও এ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যার ফলে এই আইনের সুফল পাচ্ছে না সাধারণ ক্রেতারাও।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দেশে এই আইনটি এখন অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত। এই আইনের ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায্যতা। মূল্য দিয়ে ভেজাল পণ্য কিংবা নানামুখী সেবা ক্রয়ের কথা অনেক দেশে কল্পনাতীত। এই আইনে ভেজাল বা প্রতারণা করলে লাইসেন্স বাতিলসহ ফৌজদারি আইনে দণ্ড দেওয়ার বিধানও রাখা আছে। আমাদের দেশেও এই আইন লঙ্ঘন করা হলে অর্থ জরিমানা ও কারাদন্ড সহ উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
আইনের সুফল সব সময় নাগরিকের জন্যই এবং সেই আইনের সুফল ভোগ করার জন্য নাগরিককেই সচেতন হতে হয়, তা না হলে অসাধু শ্রেণি অন্যায় ভাবে সুবিধা নিবে এটাই স্বাভাবিক। শুধুমাত্র প্রতিবছর ১৫ই মার্চ আন্তর্জাতিক ভোক্তা অধিকার দিবসে উৎসবের রূপে পালন করলেই চলবে না, সাথে সাথে গড়ে তুলতে হবে শক্ত জনসচেতনতা। শুধু আইন এবং অধিদপ্তর থাকলেই চলবে না, সরকারি এবং বেসরকারিভাবে শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত করতে হবে সচেতনতা মূলক প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাম্পেইনিং। সাথে সাথে ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজন করতে হবে প্রচারণা কিংবা পথনাট্য, যাতে করে প্রতিটি নাগরিক একজন ভোক্তা হিসেবে এই মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। কাজেই ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতকরণে আইন প্রয়োগ, প্রশাসন ও নাগরিককে একই মাত্রায় কাজ করতে হবে এবং তাঁর মধ্যে নাগরিক তথা ভোক্তার ভূমিকা হবে অন্যতম নিয়ামক।