ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি

সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বাজার তদারকি

| বৃহস্পতিবার , ৬ মার্চ, ২০২৫ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম গত ৩ মার্চ বাজার তদারকিতে নেমেছেন। তাঁরা দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যৌথভাবে তদারকিতে গিয়ে সয়াবিন তেলের দেখা পাননি। দৈনিক আজাদীতে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিদর্শনকালে দুটি দোকান থেকে খোলা সয়াবিন তেল সংগ্রহ করা হয়, যা ল্যাবে টেস্ট করে সয়াবিন কিনা যাচাই করা হবে বলে জানানো হয়। তেল ব্যবসায়ীরা কোথাও সরিয়ে রেখেছেন জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ইন্টেলিজেন্স আমাদের তথ্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযোগ করছিল, বোতলজাত ভোজ্যতেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে এবং যেগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা, ২০০ টাকার উপরে চলে গেছে। সে কারণে আজ আমরা এখানে এসেছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি ভোজ্যতেল মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না।

মেয়র বলেন, আমরা মনে করি রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের বাইরে যে ধর্মীয় রাষ্ট্রগুলো আছে প্রত্যেকটি জায়গায় ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। তারা এটাকে সওয়াব হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে রোজা এলে কেন জানি ব্যবসায়ীরা আরো অস্থির হয়ে যান। রোজার মাসে পুরো বছরের ইনকাম করার জন্য তারা পাগল হয়ে যান। আমরা এটা মনিটরিং করছি। এ মনিটরিং শুধু আজ থেমে থাকবে না। আরও হবে। তারা যাতে অবিলম্বে তেল বাজারজাত করে দাম কমিয়ে আনেন এ ব্যাপারে অ্যাকশন প্ল্যান নেব।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে বাজারে তেল সংকট করতে না পারে, সেজন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান চালাব। আমরা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সকল পণ্যসামগ্রী রাখতে চাই। তিনি বলেন, মহানগরী ও জেলাকে ২১টি সেন্টারে ভাগ করেছি। রোজার মাসে আমরা চারশ অভিযান করব। রোজার ভিতরে যাতে দ্রব্যসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় থাকে সেজন্য ৬টি স্পটে ৬৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস, ১১৫ টাকা ডজন দরে ডিম ও চিনি বিক্রি হবে খোলা বাজারে।

বিশ্লেষকরা বলেন, রমজানকে ঘিরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া ব্যবসায়ীদের নীতি যেন একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করে ফেলে। তদারকির মাধ্যমে বাজার স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ প্রশংসনীয়, কিন্তু তা বাস্তবে কতটা কাজে আসবে, সেটাই দেখার বিষয়। সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসক যৌথভাবে বাজার মনিটরিংয়ে নামার পর এই কার্যক্রম কেবল কাগজেকলমে সীমাবদ্ধ থাকলে তাতে সাধারণ ভোক্তাদের কোনো উপকার হবে না। বরং নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি বাজারে নিয়মিত ও কার্যকর মনিটরিং চলছে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ালেই চলবে না, বরং বাজার কারসাজি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও জরিমানার মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। শুধু মহানগরী নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে, কারণ দাম বৃদ্ধির প্রভাব সর্বত্রই পড়ে। একইসঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বাজারের সমন্বয় সাধন, পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না গেলে এ উদ্যোগের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজার তদারকির উদ্যোগ যদি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে রমজানে বাজার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।

আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেন, উৎপাদন বা আমদানি মূল্য হ্রাস, সাশ্রয়ী মূল্যে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে তদারকির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাজারে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতেও দেখা গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার প্রবৃত্তি। দেশে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দেন তাঁরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে