রমজানের বাকি আছে আর এক মাস। ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে রমজানের নিত্যপণ্য চিনি, ছোলা, সাদা মটর ও ভোজ্যতেলের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের বুকিং দর বেড়েছে আগে। আমদানি খরচ বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে। এখানে সিন্ডিকেটের কারসাজি হচ্ছে না।
তবে রমজান আসার আগেই তেল, চিনি ও ছোলার দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে ভোক্তাদের। তারা বলছেন, প্রতি বছর রমজান এলে বিভিন্ন সংকটের কথা বলে ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। অথচ আমরা শুনে আসছি, এবার ব্যবসায়ীরা রমজানকে কেন্দ্র করে প্রচুর পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন। তাই প্রশাসন যদি এখন বাজার মনিটরিং না করে তবে রমজান আসতে আসতে ভোগ্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে যাবে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনির দাম ছিল ২ হাজার ১৮০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সেটি ১৬০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৪০ টাকায়। অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে পাম তেলের দাম। বর্তমানে প্রতি মণ পাম তেল ২৮০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯৩০ টাকা। এছাড়া সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মণ ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪৫০ টাকায়।
এদিকে ভালো মানের প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ার ছোলা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। তবে বাজারে এখনো মিয়ানমারের ছোলা আসেনি।
মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। এছাড়া মটর ডালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা। তবে বেড়েছে সাদা মটরের দাম। সাদা মটর কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। এছাড়া চিকন মুগ ডাল কেজিতে ১৬ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকা এবং মোটা মুগ ডাল কেজিতে ৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।
অপরদিকে রসুন কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। চীনা এবং ভারতীয় আদার দাম গত দুই সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় আদা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা এবং চীনা আদা ৮০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে তার প্রভাব পড়ছে।
অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। বরাবরের মতো অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। আপাতত দাম একটু বাড়তি। মিয়ানমারের ছোলা বাজারে আসা শুরু হলে দুই ধরনের ছোলার দাম কমতে পারে। এছাড়া রমজানে ভোজ্যতেল, সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। বেশ কয়েক মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজার চড়া। মাঝখানে কিছু কমলেও চাহিদা বাড়ার কারণে আবারও দাম বাড়ছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, তিন-চার মাস আগে থেকে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে সেইসব পণ্য গুদামজাত হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির কারণে বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার ছোলার দাম কিছুটা চড়া। এখানে ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। তবে কোনো পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারা একেক সময় একেক পণ্য নিয়ে খেলেন। কখনো পেঁয়াজ, কখনো চাল, কখনো ডাল; এখন আবার তেল ও চিনি দুটো নিয়েই খেলছেন। মাঝখানে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা।
তিনি বলেন, রমজান মাস সংযমের মাস। ওই মাসে যেখানে ক্রেতাদের কাছে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির কথা, সেখানে হয় উল্টোটি। ব্যবসায়ীরা মাসটিকে ক্রেতাদের পকেট কাটার উপলক্ষ করে নেন। সিন্ডিকেটের কাছে অনেক সময় প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়ে। রমজানের আসার এক মাস আগে থেকে দাম বাড়ানো শুরু হয়ে গেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব, যাতে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষা করা হয়।