চট্টগ্রাম আদালত পাড়া এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে খুনের মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অপরজন হলেন, রিপন দাস। এরমধ্যে গত বুধবার রাত পৌনে ১২ টায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের সামনে থেকে চন্দন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে ভৈরব, এরপর ভৈরব থেকে ঢাকা, তারও পরে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ফের ভৈরবে গিয়েছিলেন চন্দন দাস। গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশল হিসেবে তিনি এ কাজ করেছেন বলে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন নগরীর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম। অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় আনোয়ারা থানা এলাকা থেকে রিপন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিপন দাস চট্টগ্রাম আদালত এলাকার পাশের পাথরঘাটা হরিস চন্দ্র লেইনের মৃদুল দাসের ছেলে। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন জানিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী তারেক আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আইনজীবী আলিফ খুনের প্রাপ্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে নীল রঙের গেঞ্জি পড়া রিপন দাসকে শনাক্ত করা হয়। তার হাতে বটি ছিল। রিপন দাস নগরীর চকবাজার এলাকার মেডিসিন সপে চাকরি করতেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাস চট্টগ্রাম আদালত সম্মুখের মেথরপট্টি এলাকার মৃত ধারী দাসের ছেলে উল্লেখ করে কাজী তারেক আজিজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের কোতোয়ালী থানা পুলিশ ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে চন্দন দাসকে গ্রেপ্তার করেছে। এ অভিযানে আমাদের গোয়েন্দারাও কাজ করেছেন। আত্মগোপনের জন্য ভৈরব পৌর শহরের সুইপার কলোনিতে থাকা শ্বশুর বাড়িতে যাবেন এমন উদ্দেশ্য ছিল তার। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার পরবর্তী চন্দনকে ভৈরব থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কোতোয়ালী থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আগামীকাল (আজকে) তাকে আদালতে তোলা হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার এড়াতে নানা কৌশল গ্রহণ করেন চন্দন দাস। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার মধ্যে ভৈরব রেলস্টেশনে নামার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি ট্রেন থেকে নামেন রাত সাড়ে ১১ টায়। যে ট্রেন থেকে ভৈরব স্টেশনে তার নামার কথা ছিল তা হয়নি। অপর একটি ট্রেন থেকে তিনি নামেন। ট্রেন পরিবর্তনের কারণেই তার বেশি সময় লেগেছিল। রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেন চন্দন। এরপর রিকশার জন্য দাঁড়ালে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্র আরো জানায়, চন্দন মুখে মাস্ক পড়েছিলেন। যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে। কিন্তু আমাদের কাছে তার গায়ে থাকা কাপড়ের বিবরণ বিষয়ে তথ্য ছিল। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার পরবর্তী চন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে তিনি আইনজীবী খুনের কথা অস্বীকার করেন। পরে কোপানোর ভিডিও দেখালে তিনি চুপ হয়ে পড়েন এবং ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এদিকে গ্রেপ্তার পরবর্তী হ্যান্ডকাপ পরা ও পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় চন্দনের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তাকে বলতে দেখা যায়, ‘আমাকে এক বোতল মদ খাইয়ে দেওয়া হয় এবং বলা হয় তুমি মার’। তবে কে তাকে মদ খাইয়ে দিয়েছিলেন সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় আসামি কী করে এমন বক্তব্য দিয়েছেন? আমরা সবাই দেখেছি সুস্থ মস্তিস্কে চন্দন দাসসহ তার সহযোগীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে খুন করেছেন। অথচ এখন তাকে দিয়ে ভিন্ন কিছু বলানো হচ্ছে। ঘটনার যারা মূল পরিকল্পনাকারী তাদেরকে বাঁচাতেই এই কাজ নয় কী? পুলিশের এমন কাজ গুরুতর অন্যায় বলেও দৈনিক আজাদীকে জানান আইনজীবী মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন না মঞ্জুরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর একপর্যায়ে আদালত সম্মুখের অদূরে মেথরপট্টি এলাকায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের অনুসারীরা। আদালত প্রাঙ্গণে হাঙ্গামা ও সংঘর্ষের এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। এতে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ ও ১৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এছাড়া, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা বাদী হয়ে ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চন্দন দাসসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে একটি, তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি এবং সর্বশেষ গত সোমবার মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী নামের এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। সবমিলে এখন পর্যন্ত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন না–মঞ্জুরকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও খুনের ঘটনায় ৬ টি মামলা দায়ের হয়।












