ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত ১৭

চট্রগ্রামমুখী মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন এগার সিন্ধুরের পেছনে থেকে বগিতে আগাত করে কন্টেনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা, আহত শতাধিক ৩ জন বরখাস্ত, তদন্তে কমিটি

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি কন্টেনার ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি উল্টে অন্তত ১৭ জনের প্রাণ গেছে। গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে রাতেই ১৬ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, মালবাহী ট্রেনটি এগার সিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে আঘাত করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা নাগাদ ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ চলছে।

ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ করছে জানিয়ে সংস্থাটির সিনিয়র স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার বলেন, আহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

এদিকে দুর্ঘটনার জন্য কন্টেনারবাহী ট্রেনের চালক ও তার সহকারীকে দায়ী করছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ওই কন্টেনারবাহী ট্রেনটির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

দুর্ঘটনায় তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে দুটি কমিটি। দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরও ভৈরব স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চলছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকা ও আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে ঘটনাস্থলে এসেছেন পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

ভৈরব রেলওয়ে থানার এসআই মির্জা মো. মুক্তা বলেন, দুর্ঘটনায় উল্টে যাওয়া বগিগুলোর নিচে কেউ চাপা পড়ে আছে কিনা তা দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা। বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ভিড় করে আছেন সেখানে।

দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে থেকে ছেড়ে আসা এগার সিন্ধুর এঙপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর কন্টেনার ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এগার সিন্ধুর যখন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখন এটার পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। সেখানে একটা সাইড কলিশন হয়েছে। যার ফলে হতাহত আছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সেখানে কাজ করছে। আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।

কন্টেনার ট্রেনের চালক সিগন্যাল অমান্য করায় দুর্ঘটনা : রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, কন্টেনারবাহী ট্রেনটির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালে। কিন্তু তারা সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটি চালিয়ে চলে আসে। একই সময় ভৈরব স্টেশন থেকে বের হয়ে ঢাকার পথে আসছিল যাত্রীবাহী এগার সিন্ধুর এঙপ্রেস। চট্টগ্রামমুখী মালবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিন এগার সিন্ধুরের পেছন থেকে তৃতীয় বগিতে আঘাত করে।

কোনো স্টেশনের আউটার হচ্ছে ট্রেনগুলোকে অপেক্ষায় রাখার জায়গা। অন্য ট্রেনকে জায়গা দিতে আউটার এলাকায় ট্রেন থামার সংকেত বাতি (সিগন্যাল) আগেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই সংকেত বাতি জ্বলেনি, নাকি কন্টেনার ট্রেনের চালক সংকেত দেখতে পাননিএমন প্রশ্নের উত্তরে রেল কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, এটা তো তদন্তের বিষয়। তিনি সিগন্যাল দেখেননি, না অন্য কোনও কারণ ছিল, এসব খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি কাজ করবে।

তিনি জানান, এগার সিন্ধুর যখন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখন এটার পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। সেখানে একটা সাইড কলিশন হয়েছে। যার ফলে হতাহত আছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সেখানে কাজ করছে। আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।

৩ জন বরখাস্ত, তদন্তে কমিটি : রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মালবাহী ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা তদন্তে তারা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। একটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এবং অপরটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর বাইরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তরফে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উদ্ধারকৃত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। লাশ শনাক্তে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ জানান, দুর্ঘটনায় আহত এ পর্যন্ত ৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নিহতনিখোঁজদের খোঁজে স্বজনরা : ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে ঘটনাস্থলে এসেছেন পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনরা। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। রাত হয়ে যাওয়ায় অন্ধকারে দুর্ঘটনায় থাকা মানুষের খোঁজ পাচ্ছেন না তারা।

ভাইয়ের খোঁজ নিতে আসা ভৈরবের আগানগর এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই বিদেশ যাবে বলে ট্রেনে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ শুনি ট্রেন দুর্ঘটনা। এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছি। অনেক খোঁজ করেও কোথাও তার সন্ধান পাচ্ছি না।

নানীর খোঁজ নিতে আসা মো. সফিকুল হোসেন বলেন, আমার নানী ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন আগে বেড়াতে এসেছিলেন। আজকে ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়ার জন্য এগার সিন্ধুর ট্রেনে রওনা দেন। স্টেশন অতিক্রম করার পর শুনি দুই ট্রেনের সংঘর্ষ। এখন আমার নানীর সন্ধান পাচ্ছি না। জানি না বেঁচে আছে না মরে গেছে।

ভৈরব রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্য নাজমুল হক বলেন, আমরা ঘটনার পর থেকে আহত ও নিহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। গুরুতর আহতদের রক্তের ব্যবস্থা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি ক্রয়কে আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধশিশুপার্ক সিলগালা করল জেলা প্রশাসন