বছরজুড়ে পর্যটকে সরব থাকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। সৈকতে নেমেই পর্যটকেরা চায় অতল সমুদ্রের ঢেউয়ের ছোঁয়া নিতে। কিন্তু সেই আনন্দ নিতে গিয়ে অসতর্কতায় লাশ হচ্ছেন পর্যটকেরা। এতে দীর্ঘদিনের লালিত আনন্দ ভ্রমণ মুহূর্তেই রূপ নিচ্ছে বিষাদে। গত এক দশকে সাগরে গোসল করতে নেমে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারায় অন্তত শতাধিক পর্যটক। এদের বেশিরভাগ সাগরের পানিতে নামার নির্দেশনা না মেনে বা গুপ্তখালে পড়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় ইনানী সৈকতে সাগরে গোসলে নেমে নাফি শাহরিয়ার (৩০) নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়।
উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হোসেন। স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে ঢাকার ছেলে নাফি শাহরিয়ার তার স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। পরে তারা উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকার হোয়াইট কিচেন হোটেল উঠেন। দুপুরে স্বামী–স্ত্রী মিলে হোটেলটির সামনের সৈকতের সাগরে গোসলে করতে যান। গোসলের এক পর্যায়ে ভাটার সময় স্রোতের টানে স্বামী–স্ত্রী দুইজনে ভেসে যেতে থাকেন। এতে তাদের শোর–চিৎকারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন স্ত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও স্বামী ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হন।
পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, খবর পেয়ে বিচকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা নিখোঁজ পর্যটকের সন্ধানে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে উদ্ধার তৎপরতা চালায়। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ইনানী এলাকার হোটেল হোয়াইট কিচেনের সামনের সৈকতে নিখোঁজ পর্যটকের মৃতদেহ ভেসে আসে। পরে স্থানীয়দের খবরে সেটি উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভীর হোসেন বলেন, সাগরের আচরণ সবসময় পাল্টায়। জোয়ারের সময় যেস্থানে সমতল, ভাটার সময় সেখানে খাদের সৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিপাকে হঠাৎ সৃষ্টি হয় চোরাবালির। তাই সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট যেখানে লাইফগার্ড ও বিচকর্মী দায়িত্বপালন করে সেখানে ছাড়া সি–গাল, ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্টে গোসলে নামা অনিরাপদ। একইভাবে হিমছড়ি, ইনানী, পেঁচারদ্বীপ, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন সাগরে গোসল করতেও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। এসব স্থানে নজরদারি রেখে উদ্ধারকর্মী দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল প্রশাসনের নেই। তাই সৈকত জুড়ে লাল নিশানা উড়ানো স্থানে সাগরে নামা উচিত নয়।
সি–সেইফ লাইফ গার্ডের সুপার ভাইজার ওসমান গণি বলেন, পর্যটকদের সতর্ক করতেই লাল নিশানা উড়ানো হয়। ভাটার সময় সাগরে নামা নিষেধ। কিন্তু অনেকে এসব নির্দেশনা না মেনে সাগরে নেমে যান।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের ওসি মিজান বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য সাগরে সতর্কতামূলক বিভিন্ন নির্দেশনা থাকে। এসব নির্দেশনা মাইকে এবং বিভিন্নভাবে প্রচার করা হয় নিয়মিত। কিন্তু অনেকেই এসব মানেন না। না মানাদের বেশিরভাগ সাগরে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, পুরো সৈকত জুড়ে পানির নিচে সাগরের বালি নরম থাকে। ঢেউয়ের পানি উপরের দিকে ঠেললেও নিচে নামার সময় সাগরের দিকে স্রোতের টান বেশি। এ টান সামলাতে না পেরে অনেক পর্যটক ভেসে যায়। এছাড়া প্রাকৃতিক নিয়মে সাগরে একেক সময় একেক পয়েন্টে গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়। গুপ্তখালে আটকে বা সাগরের অথই পানিতে ভেসে গিয়ে অনেকে মারা যান।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটক সেবায় জেলা প্রশাসন থেকে ৪০ জন বিচকর্মী ও ৩০ জন লাইফগার্ড সদস্য কাজ করছে। সুগন্ধা, লাবণীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র (হেল্প ডেস্ক)। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সচেতনতায় সৈকতজুড়ে মাইকিংসহ প্রচারণা নিয়মিত চালানো হয়। ফলে সৈকতে ডুবে প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে।