সারাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চট্টগ্রামের ৭টি কেন্দ্রে এমবিবিএস ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নেন পরীক্ষার্থীরা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এই ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রামে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ২১১ জন। এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯০৫ জন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে থাকেন। তাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে আসেন একাধিক অভিভাবক। শিক্ষার্থীরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা দিলেও বাইরে হাজারো অভিভাবক এক জায়গায় গাদাগাদি করে অবস্থান করেন। এতে স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দামপাড়া ও জিইসি ক্যাম্পাস, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭টি কেন্দ্রে এমবিবিএস ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। অর্থাৎ অনুপস্থিত ৬ হাজার ১৮ জন। সে হিসেবে আসনপ্রতি ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, দেশের ৪৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। এছাড়া ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন রয়েছে ৬ হাজার ৩৪০টি। সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা ১০ হাজার ৬৯০ জন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এইচএসসিতে অটোপাস পায় শিক্ষার্থীরা। যার কারণে এবার ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।
ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে। এর কম পেলে অকৃতকার্য বলে বিবেচিত হবেন। এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করে মূল্যায়ন করা হবে। লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রতিবছর বিদেশিসহ ২৩০ জন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করা হয়। বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করা হয় ৫০ জন। এছাড়াও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্মি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রামে (এএমসিসি) মেডিকেল ক্যাডেট (এএফএমসি) এবং আর্মি মেডিকেল কর্পস ক্যাডেট (এএমসি) হিসেবে ভর্তি করা হয় ১০০ জন শিক্ষার্থী। ডেন্টাল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবেদন শুরু হয়েছে ২৭ মার্চ থেকে, যা শেষ হবে ১৫ এপ্রিল। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৩০ এপ্রিল।
চট্টগ্রামে বেসরকারি মেডিকেলের মধ্যে ইউএসটিসি’র চিকিৎসা অনুষদের অধীনে প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন দেশি ও ২৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রয়েছে। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ১০০ জন, চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে ৯০ জন, নাসিরাবাদ এলাকার সাউদার্ন মেডিকেল কলেজে ৬৫ জন, চন্দ্র নগর এলাকার মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন, চান্দগাঁও শমসের পাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী মেডিকেল কলেজে (আইআইএমসিএইচ) ৫০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এই সবকটা মেডিকেল কলেজই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ রাখতে কেন্দ্রে সবধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আনা নিষিদ্ধ করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতও। করোনার সংক্রমণ রোধে নির্দেশনা মেনে পরীক্ষার্থীরা মাস্ক পরে কেন্দ্রে আসেন। এছাড়া প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মাল স্ক্যানার, জীবাণুনাশক অটো স্প্রে মেশিনসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাইরে অভিভাবকদের মাঝে সেই সচেতনার অভাব দেখা যায়। সবাই মাস্ক পরলেও সামাজিক দূরত্ব কেউ মানেনি।