ভেজাল থামছে না খাদ্যপণ্যে

বাড়ছে কিডনি লিভারসহ নানা রোগের ঝুঁকি দোষীদের যাবজ্জীবনসহ সর্বোচ্চ সাজা চান সচেতন মহল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

টেক্সাইলের কাপড়ের রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, আইসক্রিম, মিষ্টি, পাউরুটি, বিস্কুট দই, ললিপপ, চকোলেট এবং কেক। এমনকি শিশু খাদ্য গুঁড়ো দুধেও পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। এর বাইরে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক সবজি, ফলমূল ও মাছ তরতাজা রাখতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। এছাড়া বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা ও আনারস। বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের জয়জয়কার হলেও প্রশাসনের অভিযানে কেবল জরিমানা করেই দায় সারা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যে ভেজাল বন্ধে প্রশাসন মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালায়। নিয়মিত অভিযান না চালানোর কারণে খাদ্যে ভেজাল দেয়ার সাথে জড়িত চক্রটি আবারও মাথাচড়া দিয়ে উঠে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। খাদ্য মানেই তাই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, হাইড্রোজ, ইথোপেনসহ নানা ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক বিষের সংমিশ্রণ। এসব খাবার খেয়ে মানুষ কিডনি বিকল, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া দেশে খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার কোনো নজির নাই। ফলে তারা শুধু জরিমানার অংক গুনেই ফের একই কাজ করতে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ভোজাল পণ্যের ছড়াছড়ি। মূলত এসব পণ্যের সহজলভ্যতা ও প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব এর জন্য দায়ী। বিষাক্ত ও রং মিশ্রিত খাবার ডায়াবেটিস ছাড়াও কিডনি, লিভারসহ অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসারের কারণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। লিভার ও কিডনি বিকলের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত খাবারই দায়ী। ভেজালের সঙ্গে জড়িত লোকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যকে ভেজালমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর অপরাধ হিসেবে প্রতিবেশি দেশ ভারত সরকার যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে থাকে। এছাড়া চীনে মৃত্যুদণ্ড, পাকিস্তানে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমাদের দেশেও খাদ্যে ভেজাল মেশালে আইন আছে কিন্তু এর যথাযথ প্রয়োগ নাই।
জানা গেছে, বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ-১৯৫৯ (সংশোধিত ২০০৫) এ খাদ্য ভেজাল পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এ সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। নতুন প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ তে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসবের খুব একটা প্রয়োগ হয় না বললেই চলে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিচ্ছি। সমস্যা হচ্ছে- যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, তারা দ্বিতীয়বার খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছেন না। কিন্তু নতুন করে আবার একজনে শুরু করে দিচ্ছে। আমরা যখনই যে মাধ্যম থেকে খোঁজ পাই না কেন আমরা দ্রুত অভিযান চালাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সচেতনতা দরকার।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছে এটি ঠিক। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। ভেজাল বিরোধী অভিযানে দেখা যায়, প্রশাসন প্রায় সময় জরিমানা দিয়েই দায় সারে। কিন্তু আমরা বারবার বলে আসছি, জরিমানার পরিবর্তে যদি অপরাধীদের জেল দেয়া যায়, তাহলে অপরাধের প্রবণতা কমতো। আবার দেখা যায়, প্রশাসন জরিমানা দেয়ার পরে তিন মাস আর ওই প্রতিষ্ঠানের আশপাশেও যায় না। ফলে ওই অপরাধী একই ধরণের কাজে আবারো রেপরোয়া হয়ে উঠে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, তাদের ফলোআপে রাখা দরকার। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করা দরকার। তাহলে অপরাধের মাত্রা কমে আসবে বলে আমি মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুল ড্রেস না পরায় ঢুকতে দেয়া হল না তাদের
পরবর্তী নিবন্ধদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে