‘ভূমিহীন’ নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন না ‘ওরা’

আত্মীয়স্বজন নাম দিয়ে থাকেন ভাড়াটিয়া রাউজানের আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প

রাউজান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১ জুন, ২০২১ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

গত প্রায় তিন দশকে রাউজানে যেসব আশ্রয়ন ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ভূমিহীন হিসাবে ঘর পেয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার সেখানে থাকেন না। তাদের ঘরগুলোতে রাখা হয়েছে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্নস্থান থেকে আসা গৃহহীন পরিবারকে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভূমিহীনদের যাছাই বাছাই করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারগণ। তাদের সুপারিশ সম্বলিত তালিকা মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কমিটি ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দিয়ে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ কতিপয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক বিবেচনায় ভূমিহীন তালিকায় এলাকার স্বচ্ছল ও ভূমি মালিকদেরকেও ভূমিহীন সার্টিফিকেট দিয়ে আসছে। বিএনপি-জামায়াত-এরশাদ সরকারের আমল থেকে রাউজানে এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। উপজেলার পাহাড়তলী, কদলপুর ও পশ্চিম রাউজান আশ্রয়ন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শনকালে কথা হয় এখানে বসবাসকারী বেশ কয়েকজন নারী পুরুষের সাথে। ধারণা পাওয়া যায় এসব প্রকল্পে যারা ভূমিহীন হিসাবে ঘর পেয়েছে তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পরিবার বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন না। তাদের ঘরগুলোতে আত্মীয়স্বজন সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভাড়াটেদের। ঘর বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে কেউ কেউ ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে তাদের ঘর বিক্রিও করে দিয়েছে। এসব ঘর তারা হস্তান্তর করেছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএনপি আমল থেকে ভুমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা ঘর পেয়ে আসছে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেসব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ অথবা তাদের ঘনিষ্ট আত্মীয়স্বজনরা। যাদের অনেকেই জমি জমার মালিক।
পূর্বগুজরা ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্য বিএনপির আমলে ভুমিহীন হিসাবে ঘর পেয়েছিলেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। এই সরকারের আমলেও তিনি পাহাড়তলী আশ্রয়ন প্রকল্পে নিজের ঘনিষ্টজনদের নামে ঘর নিয়েছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন ওই নারী ইউপি সদস্যের আত্মীয়স্বজনের নামে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে বছরের পর বছর থাকছেন বাইরের লোক। তাদের দাবি তারা সকলেই ওই নারী সদস্যের আত্মীয়স্বজন।
পশ্চিম গুজরা ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইলের ভাই মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের রয়েছে মগদাই গ্রামে বাড়ি ভিটা। এই সালাউদ্দিনের নামেও কদলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্ধ আছে। তার ঘরটি সেখানে বছরের পর বছর তালাবদ্ধ থাকে। সেখানে তিনি নাম সর্বস্ব একটি সমবায় সমিতি গঠন করে সভাপতির পরিচয় নিয়ে মাঝে মধ্যে আসা যাওয়া করেন।
স্বচ্ছল ও বাড়ি ভিটার মালিকরা কিভাবে ভূমিহীনদের ঘর পেয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলেছেন জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ভূমিহীন সার্টিফিকেট নিয়ে ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশে তারা ঘর পেয়েছেন। পাহাড়তলী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে কথা বললে পাহাড়তলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন এই ঘর যখন বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তখন তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন না। পাহাড়তলীর এই প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া ৮০ ঘরের মধ্যে অনেকেই প্রকল্পের ঘরে থাকেন না বলে তিনি স্বীকার করেন। একই কথা বলেছেন কদলপুরের চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, যারা প্রকল্পের ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে না তাদের সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের অনুকূলে দেয়া ঘর বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। বাতিল করা ঘর এলাকার সত্যিকারের ভূমিহীনদের দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীও কঠোর অবস্থান নিয়ে আছেন বলে এই কর্মকর্তা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলা নিয়ে সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধদোষ স্বীকার করে বিতর্কিত বক্তা আমির হামজার জবানবন্দি