ভূমিকম্প নিয়ে সেমিনারে ১৩ পরামর্শ

‘বালিমাটির উপর তৈরি ভবন অতি ঝুঁকিতে’

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে যেসব দালান কোঠা রয়েছে সেগুলো বালি মাটির উপর তৈরি হয়েছে। যার কারণে সেখানে ঝুঁকিও রয়েছে বেশি। এছাড়া সেখানের দালান কোঠাগুলোর অবকাঠামো দুর্বল বা ভূমিকম্প প্রতিরোধক নয়। শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ভবনগুলো বা সেখানে বসবাসকারী লোকজন ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরীর ইউএসটিসি’র গবেষণা সেল আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কনফারেন্স হলে ‘ভূমিকম্প সচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় ইউএসটিসির উপাচার্য ও চুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বালি মাটির উপর তৈরি ভবনগুলো শক্তিশালী ভূমিকম্পের সময় স্থির থাকতে পারে না। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই নড়েচড়ে উঠে। এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ সচেতনতা। ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরীর ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ স্কুলও রয়েছে। এসব স্কুল টেকসই নয়। ভূমিকম্প হলে যাতে কারো ক্ষতি না হয় সে জন্য স্কুলের টেবিলগুলো প্রতিরোধক করে গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনায় সভায় মো. জাহাঙ্গীর আলম কঙবাজারের সমুদ্র তীরবর্তী হওয়া ভবন ও মহেশখালীর মাতারবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, কর্ণফুলীর তীরের মতো কঙবাজারের সমুদ্র তীরও বালি মাটির। সেখানের ভবনগুলোও কর্ণফুলীর পশ্চিম তীরের মতো অতি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা শীঘ্রই গ্রহণ করতে হবে। মারতারবাড়িতে চলমান উন্নয়নযজ্ঞ নিয়ে তিনি বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আমাদের দেশের জন্য। যেনতেনভাবে যাতে নির্মাণ কাজ শেষ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারবে এমন অবকাঠামাই নির্মাণ করতে হবে। নগরীর পুরাতন ভবন সম্পর্কে প্রফেসর জাহাঙ্গীর বলেন, নতুন ভবনগুলো কিছুটা ভূমিকম্প প্রতিরোধক হলেও পুরাতন ভবনগুলোর অবস্থা কিন্তু তার উল্টো। প্রণোদনার মাধ্যমে এসব ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভায় ভূমিকম্প বিষয়ক ১৩ টি পরামর্শ তুলে ধরেন প্রফেসর মো. জাহঙ্গীর আলম। সেগুলো হলো- বাড়ি ঘরের ভীত ও কাঠামো শক্ত করে তৈরি করতে হবে এবং তৈরির সাথে মাটির গুণাগুন পরীক্ষা করতে হবে। বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে এবং ভবন তৈরির সময় পুর প্রকৌশলীর পরামর্শ নিতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য একাধিক পথ রাখুন। ভূমিকম্পের সময় ঘরের দরজা খুলে রাখতে হবে। নরম মাটি বা গর্তের উপর ভবন নির্মাণ পুর প্রকৌশলীর পরামর্শ মোতাবেক করতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দ্রুত বৈদ্যুতিক সুইচ গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। হেলমেট কিনে রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় ঘরে না থেকে পার্শ্ববর্তী খোলা মাঠে আশ্রয় নিতে হবে। ভূমিকম্পের সময় ঘরে থাকলে শক্ত খাট, লোহার টেবিল ইত্যাদির নীচে আশ্রয় নিতে হবে। গাছের নিতে আশ্রয় নেয়া যাবে না। দেয়াল নির্ভর ঘরের কোণে আশ্রয় নিতে হবে এবং কলাম নির্ভর ঘরে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিতে হবে। সাহস ও মনোবল অটুট রাখতে হবে। সর্বশেষ পরাশর্ম হলো- মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প মানুষ মারে না, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
এদিকে ভূমিকেম্পর ক্ষয়ক্ষতি রুখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনাও তুলে ধরা হয়েছে আলোচনা সভায়। সেগুলো হলো- নতুন বিল্ডিং অনুমোদনের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্ট্রাকচারাল কাঠামো নির্ধারণ করা। অনতিবিলম্বে সংস্কারযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংগুলো চিহ্নিতকরণ। প্রতি জেলায় একটি করে ভূমিকম্প দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনাকরণ। টিভি, রেডিও ও নিউজ পেপারে ভূমিকম্প ও তার পরিণতির প্রতি মনোযোগ অনুধাবনের জন্য বুলেটিন প্রচারকরণ এবং সচেতনতার জন্য স্কুল কলেজে জাতীয় শিক্ষাসূচির অধীনে ভূমিকম্পের উপর ছোট পাঠদান অন্তর্ভুক্তকরণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে ৮ দিন ধরে ভাসমান ১৪ জেলে উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভার টুকিটাকি