ভূমিকম্পে ভয় নয়, সতর্কতায় থাকতে হয়

পূর্বা চৌধুরী | বুধবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মত যে প্রাকৃতিক দুর্যোগটি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হল ভূমিকম্প। রিকটার স্কেলে, সিসমোগ্রাফ বা সিসমোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ করা গেলেও ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস পাওয়ার মত যন্ত্র এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। পৃথিবীর কঠিন উপরিভাগ কয়েকটি বড় এবং ছোট টুকরায় বিভক্ত, যেগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। পৃথিবীতে প্রধানত সাতটি টেকটোনিক প্লেট রয়েছে যা পৃথিবীর ভূত্বককে গঠন করেছে। টেকটোনিক গঠনগত দিক দিয়ে ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান প্লেট এবং বার্মিজ মাইক্রোপ্লেটের সংযোগ স্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই প্লেটগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরের উষ্ণ, চলমান অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপর ধীরে ধীরে চলাচল করে। এভাবে চলাচলের সময় এরা একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়, ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। এটি দিনে বা রাতের যে কোন সময় ঘটতে পারে। আবার সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পরিবারের সব সদস্যকে যার, যার কাজে বাইরেও যেতে হয়। তাই ভূমিকম্পে ভয় নয়, মনে সাহস রাখতে হবে, আর জানতে হবে কিছু সতর্কতা। কারণ সতর্কতা জানা থাকলেই এই জ্ঞান প্রয়োজনে কাজে লাগবে। যেমন বাসা বাড়িতে রান্নার পর গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে। অনেক উঁচু ভবনে বসবাসকারী ব্যাক্তিকে প্রথমে বাসায় থাকা শিশু বা বয়ষ্কদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করতে হবে, এবং নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। আর দৌড়াদৌড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে বা লিফট ব্যবহার করে ছাদে ওঠা বা নিচে নামার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ভূমিকম্পের সময় লিফট বা সিঁড়ি ব্যবহার কোনটাই নিরাপদ নয়। এ সময় কোন বড় পিলার, যার অবস্থান বাইরের দরজা থেকে দূরে তার নিচে, বা টেবিল বা খাটের নিচে শুয়ে আশ্রয় নিতে হবে, যাতে মাথায় কিছু ভেঙে পড়তে না পারে। আর হাতের কাছে ছোট টর্চলাইট, মোবাইল, পানির বোতল রাখতে হবে। এসময় কাচের জানালা, দরজা বা বড় আলমারি থেকেও দূরে থাকতে হবে, যাতে কাচ ভেঙে শরীরে পড়তে না পারে। আর বাইরে থাকলে কোন স্থাপনা, ফুটপাত এগুলো থেকে সরে গিয়ে খোলা কোন জায়গায় অবস্থান নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ভূকম্পন থেমে গেলেও মাথা ঘোরা, মৃদুকম্পন অনুভব করা, বা অতিরিক্ত ভয় বা আতংক থেকে প্যানিক অ্যাটাক হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া সহ শরীরে নানা উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় একটু ধৈর্য্য ধারণ করে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে আর জোরে জোরে নাক দিয়ে লম্বা দম নিয়ে মুখ দিয়ে দম ছাড়ার অনুশীলন করতে হবে আট থেকে দশবার। এই প্রক্রিয়ায় শিথিলায়ন চর্চা মন ও শরীরকে শিথিল করে। বার বার সোশ্যাল মিডিয়া বা ফেইসবুকের খবর দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এসময় অনেক মিথ্যা খবর বা গুজব মানুষের মনে আতংকের সৃষ্টি করতে পারে। মনে রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস, তাঁকে স্মরণ করতে হবে কেননা তিনিই এই বিশ্বের মালিক আর পালনকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবিতা স্বপ্ন দেখায়, অবিশ্রান্ত মনকে নাড়া দেয়
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে