মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালার তাফেঘাঘতে গ্রাম। শুক্রবারের ভূমিকম্পে ওই গ্রামের ২০০ জন বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আরও অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা হাসান বিবিসিকে জানান, এই গ্রামের সব মানুষ হয় হাসপাতালে, আর না হয় মৃত। গ্রামের কেউই নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা হাসান বলছিলেন, তারা (নিখোঁজরা) সরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তাদের হাতে নিজেদের বাঁচানোর সময়ও ছিল না। ইট ও পাথরের তৈরি গ্রামের পুরনো ধাঁচের বাড়িগুলো কোনোভাবেই ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সামাল দেয়ার মত ছিল না বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
হাসান জানান, তার চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তাকে সেখান থেকে বের করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। গ্রামে কারো কাছে এই মাত্রার ধ্বংসস্তূপ খোড়ার যন্ত্রপাতি নেই। আর তিন দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞরাও এসে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, মরক্কোর কর্তৃপক্ষের উচিৎ সব ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু তিনি সন্দেহ পোষণ করেন যে নিজেদের অহঙ্কারের কারণে হয়তো তারা সেই সহায়তা নেবে না।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা রহমান ভূমিকম্পে তার তিন ছেলে ও স্ত্রীকে হারিয়েছেন। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর রহমান তিন কিলোমিটার দৌড়ে তার বাড়ির দিকে আসেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। বালি–পাথরের একটি স্তূপের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলছিলেন, আমাদের বাড়ি ছিল ওখানে। ঐ যে দেখুন সাদা কম্বল ও কিছু আসবাব এখনো দেখা যাচ্ছে। বাকি সব মাটির সাথে মিশে গেছে। গতকাল আমরা তাদের (স্ত্রী–সন্তানদের) কবর দিয়েছি। আমরা যখন তাদের মরদেহ খুঁজে পাই, তখন তারা সবাই একসাথে গুটিশুটি মেরে ছিল। তিন ছেলেই ঘুমাচ্ছিল। ঘুমের মধ্যেই তারা মারা যায়।
মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের একের পর এক গ্রামে ঠিক এই চিত্রই এখন দেখা যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এই সম্প্রদায়গুলো সাধারণত আধুনিক পৃথিবী থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্নই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বাইরের সাহায্য প্রয়োজন তাদের।
ভূমিকম্পের সবশেষ পরিস্থিতি : অ্যাটলাস পর্বতমালার মত মরক্কোর আরো অনেক অঞ্চলেই জরুরি সেবা পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষকে। বিভিন্ন এলাকায় গ্রামবাসী ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার করছেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪৯৭ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজারের মত মানুষ।
মারাকেশ থেকে ৫৫ কিলোমিটারের দক্ষিণের পাহাড়ি শহর আমিজমিজের প্রায় পুরোটাই মাটির সাথে মিশে গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল ভবনটিও এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেটির ভেতরে কাউকে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের সামনের মাঠে তাঁবু খাটিয়ে সেই তাঁবুর ভেতরেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মানুষকে।
ভূমিকম্পের পর মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ গত শনিবার দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী যেন উদ্ধারকাজে এবং জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, সেরকম নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু এখনও দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের অনেক গ্রামে, জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন সাধারণ মানুষ।